Image default
হিন্দু

হিন্দুরা তেত্রিশ কোটি দেবতার পূজা করেন । এই বিষয়ে আপনার ভাবনা কি ?

সংস্কৃতে কোটি শব্দের দুটি অর্থ, একটি হল ‘প্রকার’ এবং অপরটি হল ‘কোটি’ (সংখ্যা)। বেদে তেত্রিশ কোটি (সংস্কৃত: ত্রয়স্তিমাশতি কোটি) দেবতা বলতে বেদে তেত্রিশ রকমের দেবতার কথা বলা হয়েছে। শতপথ ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য গ্রন্থে এটি পরিষ্কার ভাবে ব্যখ্যা করা হয়েছে। অথর্ব বেদের দশম অধ্যায় সপ্তম সুক্তের ত্রয়োদশ শ্লোকে বলা হয়েছে-

যস্য ত্রয়স্ত্রিংশদ্ দেবা অঙ্গে সর্বে সমাহিতাঃ।

স্কম্মং তং ব্রুহি কতমঃ স্বিদেব সঃ।।

অর্থাৎ, পরম ঈশ্বরের প্রভাবে এই তেত্রিশ জন দেবতা বিশ্বকে বজায় রেখেছে।

শুরুতে ঋক্ বেদে তিন (৩) রকমের দেবতার কথা বলা হয়েছিল। এনারা ছিলেন- অগ্নি, বায়ু এবং সূর্য্য। ঋক্ বেদে পরবর্তী অধ্যায়ে সেই দেবতার সংখ্যা বেড়ে তেত্রিশ (৩৩) রকমের হয়। এনাদের মধ্যে এগারো জন পৃথিবীতে, এগারো জন বায়ুতে এবং বাকি এগারো জন মহাকাশ বা অন্তরিক্ষে অবস্থান করছেন।

তেত্রিশ কোটি দেবতা
ছবি: সংগৃহিত

তেত্রিশ দেবতার নাম

এরা হলেন —

১. দ্বাদশ আদিত্য
২. একাদশ রুদ্র
৩. অষ্ট বসু
৪. অশ্বিনীকুমারদ্বয়
১২+১১+৮+২=৩৩

দ্বাদশ আদিত্য : কশ্যপ ঋষি এবং দক্ষ প্রজাপতির কন্যা দিতির সন্তানরা আদিত্য। ভাগবত পুরাণ অনুসারে এরা হলেন বিবস্বান, অর্যমা, পূষা, ত্বষ্টা, সবিতা, ভগ, ধাতা, বিষ্ণু (আদিত্যদের মধ্যে প্রধান), বরুণ, মিত্র, ইন্দ্র, অংশুমান। দ্বাদশ আদিত্য, সূর্য্যেরই বিভিন্ন রূপ। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে দ্বাদশ আদিত্য দ্বাদশ মাসে দ্বাদশ রাশিতে বিচরণ করেন।

একাদশ রুদ্র : কশ্যপ ঋষি এবং গোমাতা সুরভির এগারো জন সন্তানকে বলা হয় একাদশ রুদ্র। মৎস্যপুরাণ মতে একাদশ রুদ্রের নাম হল — কপালী, পিঙ্গল, ভীম, বিরুপাক্ষ, বিলোহিত, শাস্তা, অজপদ, অহিব্রধ্ন, শম্ভু, চণ্ড, ভব। মহাদেব শিবের বিভিন্ন রূপ এই একাদশ রুদ্র। এরা সংহারের দেবতা। পদ্মপুরাণ মতে এরা হলেন —মন্যু, মনু, মহিনস, মহান, শিব, ঋতুধ্বজ, উগ্ররেতা, ভব, কাল, বামদেব, ধুতব্রত। মহাভারতের মতে এরা হলেন —অজ, একপাদ, অহিব্রধ্ন, পিনাকী, অপরাজিত, ত্র্যম্বক, মহেশ্বর, বৃষাকপি, শম্ভু, হরণ, ঈশ্বর। বৃহদারণ্যক উপনিষদে একাদশ রুদ্রকে বলা হয়েছে জীবের চালিকা শক্তি। পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং জীবাত্মা।

অষ্ট বসু:  কশ্যপ ঋষি এবং দক্ষকন্যা বসুর আটজন সন্তানকে একত্রে বলা হয় অষ্ট বসু। বহ্নিপুরাণ মতে এরা হলেন —অপ (জল), ধ্রুব (ধ্রুব তারা), সোম (চন্দ্র), অনিল (বায়ু), অনল (অগ্নি), ধর (পৃথিবী), প্রত্যুষ (সূর্য্য) ও প্রভাষ (নক্ষত্র) । বৃহদারণ্যক উপনিষদ মতে অষ্ট বসুরা হলেন—পৃথিবী, অগ্নি, বায়ু, অন্তরীক্ষ, আদিত্য, চন্দ্রমা, নক্ষত্র এবং দ্যৌ। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে ধনিষ্ঠা নক্ষত্রের অধিপতি দেবতা অষ্ট বসু ।

অশ্বিনীকুমারদ্বয়: অশ্বিনীকুমারদ্বয় বৈদিক দেবতা এবং দেবতাদের চিকিৎসক। বিবস্বান (সূর্য্য) ও শরণ্যু, নামান্তরে সংজ্ঞা দেবীর যমজ পুত্রদ্বয়। এই দুই ভ্রাতার মধ্যে অগ্রজের নাম নাসত্য এবং অনুজের নাম দস্র। মহাভারতের আদিপর্বে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের বিষয়ে উল্লেখ আছে। পান্ডুর কনিষ্ঠ পত্নী মাদ্রীর গর্ভে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের পুত্র নকুল ও সহদেবের জন্ম হয়। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে অশ্বিনী নক্ষত্রের অধিপতি দেবতা অশ্বিনীকুমারদ্বয়।

“ওম্ অশ্বিনা তেজসা চক্ষু
প্রাণেনা সরস্বতী বীরয়ম্ বচেন্দ্র ।
বালেন্দ্রেয় দধুরীন্দ্রিয়ম্
ওম্ অশ্বিনীকুমারভ্যাম্ নমঃ।। “

Related posts

সাত পাকের মাহাত্ম্য, বিয়ের সময় সাত পাক ঘোরা অনিবার্য কেন ?

News Desk

আ.লীগের আমলে বেশি নির্যাতিত হয় হিন্দু সম্প্রদায়: রিজভী

News Desk

হিন্দু শব্দের অর্থ কি? কোথা থেকে উৎপত্তি হিন্দু ধর্মের?

News Desk

Leave a Comment