Image default
আন্তর্জাতিক

যেসব কারণে ফিলিস্তিনের জয় গুরুত্বপূর্ণ

গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সঙ্গে ১১ দিনের যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরায়েল আবারও পরাজিত হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা কিভাবে বিজয়ী হলো এবং এর পেছনে কাদের ভূমিকা ছিল সেটাই আন্তর্জাতিক সংবাদ ও রাজনৈতিক মহলের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিজয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে সব সংগঠনগুলো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। অন্যদিকে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণের প্রতি ইরানের সর্বাত্মক সাহায্য ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

এছাড়া ইসরাইলের বিরুদ্ধে ১১ দিনের প্রতিরোধ যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার ঘটনায় ফিলিস্তিনি জাতির পাশে থাকার জন্য ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের মহাসচিব জিয়াদ আন নাখালা।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে লেখা চিঠিতে তিনি আরও বলেন, তিনি ইসলামি জিহাদের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষ থেকে ইহুদিবাদী শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের বিজয় সর্বোচ্চ নেতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

নাখালা তার চিঠিতে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অভিযান পরিচালনা এবং এর বিজয় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আয়াতুল্লাহ খামেনির সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। চিঠিতে তিনি আরও বলেন, ইহুদিবাদী শত্রুর কথিত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব সত্বেও ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা পূর্ণ শক্তি, উদ্যোম ও সাহস নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন যার পেছনে ছিল ইরানের পরিপূর্ণ সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা।

এদিকে ফিলিস্তিনের সব প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের ধারাবাহিক যুদ্ধে বিজয়ের ক্ষেত্রে ইরানের মহাবীর শহীদ কাসেম সোলাইমানির ভূমিকা ও তার অবদানের কথা এক বাক্যে স্বীকার করেছে। কেননা গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাসেম সোলাইমানির বিরাট অবদান ছিল।

এদিকে ইরানে ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের প্রতিনিধি নাসের আবু শারিফ বলেছেন, ইরানের সর্বাত্মক সাহায্য-সমর্থনের কারণেই ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইরান প্রথম থেকেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি রাজনৈতিক, আদর্শিক ও বস্তুগতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সমর্থন জুগিয়ে এসেছে এবং সহযোগিতার এই ধারা সবসময় অব্যাহত থাকবে’।

বাস্তবতা হচ্ছে, জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে সংগঠিত করা এবং তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন। আর এই কারণেই ইসরায়েলের প্রধান-মিত্র মার্কিন সরকার সোলাইমানিকে হত্যা করে যাতে এ অঞ্চলের সমস্ত প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে দুর্বল করা যায়। যদিও মার্কিন সরকার তাদের সে লক্ষ্যে আজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।

গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিরোধ শক্তির সামনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে, সমগ্র মুসলিম বিশ্বে স্বাধীনতাকামী ও ন্যায়বিচারকামিদের মধ্যে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তোলা।

দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের ময়দানে বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কৌশল অবলম্বন করে আধিপত্যকামী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস অর্জন করা।

তৃতীয়ত, বিরাজমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সব মুসলমানদেরকে অবহিত করা ও সচেতন করা। চতুর্থত, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি জবরদখল ও হত্যা নির্যাতনের বিষয়টি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে তুলে ধরা এবং প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর পঞ্চম লক্ষ্য হচ্ছে, মুসলিম বিশ্বে বিরাজমান বিকৃতি ও গোঁড়ামি এবং ধর্মের নামে ভ্রান্তচিন্তা-বিশ্বাসকে মোকাবিলা করে সেসব শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যারা নানা কৌশলে ইসলামের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে।

মোটকথা প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর এসব লক্ষ্য উদ্দেশ্য থেকে বোঝা যায়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবারের বিজয় ছিল অনেক বড় ঘটনা এবং চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

Related posts

ভারতের হিমাচলে বাস খাদে, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ ১৬

News Desk

ডনবাসে রুশ বোমা হামলায় ফরাসি সাংবাদিক নিহত

News Desk

তেহরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব

News Desk

Leave a Comment