Image default
আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারের নাগরিকদের ভারতমুখী ঢল

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে দেশটির হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ঢুকে পড়ছে। যে কারণে ওই অঞ্চলগুলো অস্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থীদের বিশাল ঘাঁটিতে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের তিন রাজ্য— মিজোরাম, মনিপুর এবং নাগাল্যান্ডে বর্তমানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। দেশটির সুশীল সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী, সরকারি কর্মকর্তারা এই সংখ্যা আগামী মাসগুলোতে আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন মিজোরামে। টিয়াও নদীর তীরবর্তী ঘন বনাঞ্চলের সীমান্তজুড়ে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের শরণার্থীদের মাঝে গণতন্ত্রপন্থী যোদ্ধারাও রয়েছেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই যোদ্ধাদের গতিবিধির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে।

মিজোরাম রাজ্য সরকারের একজন উপদেষ্টা রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা অত্যন্ত গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এর আগে মিয়ানমারের কিছু যোদ্ধা ভারতীয়দের সহায়তায় সীমান্ত পেরিয়ে এসেছিল। পরবর্তীতে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কখনই তাদের মিজোরামে প্রশিক্ষণের অনুমতি দেব না। আপনি যদি মিজোরামকে ঝামেলায় ফেলেন, তাহলে সেখানে শরণার্থীদের জন্য সমস্যা হবে।

রাজ্যের একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও মিয়ানমারের প্রতিরোধ আন্দোলনের একজন সদস্য বলেন, মে মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমারের অন্তত ৫০ জন নাগরিক মিজোরামে প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করেছিল। তবে মিজোরামের চাম্ফাই জেলার ওই শিবিরে কোনও ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার করা হয় নাই এবং ভারতের আধা-সামরিক বাহিনীর সৈন্যরা তদন্তের পর শিবিরটি গুঁড়িয়ে দেয়।

মিয়ানমারের প্রতিরোধ আন্দোলনের ওই সদস্য নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া সব তরুণকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ভারত সীমান্তলাগোয়া মিয়ানমারের চিন রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রায়ই সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) ক্ষমতাচ্যুত একজন সদস্য বলেছেন, চিন রাজ্যের কিছু প্রতিরোধ যোদ্ধা ভারত ও সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মির কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে টানা আন্দোলনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮৫০ গণতন্ত্রকামীর প্রাণহানি ঘটেছে। প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যাপারে অবগত মিজোরামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, স্বাভাবিকভাবেই এসব মানুষ জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়। আমার মতে তারা যা করার চেষ্টা করতে পারে, তা হলো ভারত থেকে অস্ত্র সংগ্রহ।

মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের এক হাজার ৬০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তে নয়াদিল্লির শাসনবিরোধী কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীও রয়েছে। তারা সীমান্তের উভয়পাশে নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মাদক চোরাচালানের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে বলে ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সীমান্তে সক্রিয় দুই ডজন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করে ভারতের সরকারি একটি সূত্র বলছে, এটি আসলেই উদ্বেগজনক যে, যদি বিদ্রোহীরা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়ে, তাহলে তারা নাগা এবং মনিপুরের বিদ্রোহীদের আন্দোলনে অক্সিজেন সরবরাহ করবে।

সীমান্ত পরিস্থিতির ব্যাপারে জানতে রয়টার্স মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্রকে টেলিফোন করলেও সাড়া পায়নি। পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত পরিস্থিতির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ই-মেইল এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

Related posts

যুদ্ধের সমাপ্তি নির্ভর করছে রাশিয়ার ওপর: জাতিসংঘ মহাসচিব

News Desk

যুদ্ধবিধ্বস্ত কিয়েভে আকস্মিক সফরে বরিস

News Desk

ইরাকে ইরবিল বিমানবন্দরের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলা

News Desk

Leave a Comment