Image default
আন্তর্জাতিক

বৈশ্বিক কয়লা খাত পুনরুজ্জীবিত

প্রতীকী ছবি

চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর থেকে জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ফলে হু হু করে বাড়ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাণিজ্যে বাড়ছে প্রতিযোগিতা। এসব দেশ তুলনামূলক সস্তা জ্বালানি ক্রয়ে বিকল্প উৎস খুঁজছে। ফলে বাড়ছে তাপীয় কয়লার চাহিদা ও উত্তোলন।

কিছু দেশ বন্ধ থাকা প্লান্ট আবারো চালু করছে। উদ্দেশ্য আসন্ন শীতে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি অন্যান্য দেশ উত্তোলন ব্যাপক হারে বাড়াচ্ছে। ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব দেশ রপ্তানি বাড়ানোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ মুনাফা তুলে নেয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

সারাবিশ্বেই বর্তমানে কয়লাসংক্রান্ত প্রকল্পগুলো পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। সরকারগুলো নিত্যনতুন পরিকল্পনাও হাতে নিচ্ছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রিয়ার সরকার এরই মধ্যে দেশটির শীর্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি ভারবান্ডের সঙ্গে আলাপ করেছে। জরুরি পরিস্থিতিতে কোম্পানিটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা ব্যবহারে সম্মত হয়েছে।

এদিকে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা গত মার্চে টুজলা ৪ ও কাকাঞ্জি ৫ নামের দুটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স¤প্রসারণে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ তা বাস্তবায়ন করা হবে।

ডেনমার্কভিত্তিক বহুজাতিক বিদ্যুৎ কোম্পানি অরস্ট্যাডকে দেশটির সরকার চলতি মাসে তাদের তিনটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুনরায় চালু করার পাশাপাশি তা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। উদ্দেশ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। ফিনল্যান্ড দেশটির পশ্চিম উপকূলে নিষ্ক্রিয় একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় চালুর পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে দেশটির গ্রিডে ৫৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা যুক্ত হবে। চলতি মাসের শুরুর দিকে ফ্রান্সের এমিল হাচ নামের একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় চালু হয়েছে। ছয় মাস আগে এটি বন্ধ হয়ে পড়েছিল।

জার্মানির মন্ত্রিপরিষদ গত মাসের শেষে দুটি ডিক্রি জারি করেছে। উদ্দেশ্য কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম দীর্ঘায়িত করা। পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় কেন্দ্রগুলোকে সচল করে তোলা। গ্রিসের জাতীয় গ্রিড অপারেটর ডিইএসএফএ গত মাসে জানিয়েছে, দেশটি চলমান সাতটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্বপরিকল্পনার চেয়েও বেশি সময় ধরে চালু রাখবে। উদ্দেশ্য বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠা। ইতালি সম্প্রতি গ্যাসের ব্যবহার কমাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। দেশটি বিদ্যমান কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে গ্যাসের মজুদ ধরে রাখতে নেদারল্যান্ডসও উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উত্তর মেসিডোনিয়ার বিটোলা ও অসলোমেজ মাসের দুটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০৩০ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু চলমান সংকটের কারণে এটির সময়সীমা পেছানো হয়েছে।

কয়লার মধ্যে সবচেয়ে কার্বন নিঃসরণ ঘটায় লিগনাইট। পোল্যান্ড গত মাসে লিগনাইট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়। আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এর মাধ্যমে সরবরাহ সংকট কমবে বলে মনে করছেন দেশটির জ্বালানিসংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বিদ্যমান খনিগুলো থেকে উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে দেশটির। এ বছর উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রায় যুক্ত হবে আরো ১৫ লাখ টন। সার্বিয়ার কসটোল্যাক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নতুন ইউনিট আগামী বছরই উদ্বোধনের প্রত্যাশা রয়েছে। অন্যদিকে স্পেন সরকার করুনা প্রদেশের এস পনটস শহরের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়ার সময়সীমা পেছানোর নির্দেশ দিয়েছে।

ব্রিটেনের ন্যাশনাল গ্রিড ড্রাক্স গ্রুপ ও ইডিএফ এনার্জির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। এ চুক্তির অধীনে কোম্পানিগুলোর দুটি প্লান্টের চারটি ইউনিট সম্প্র্রসারণ করা হবে।

ইউক্রেনের দনবাস প্রদেশের খনিগুলো রুশ সেনারা অবরোধ করে রাখলেও এ বছর দেশটির কয়লা উত্তোলন ২০ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে বতসোয়ানা সরকারের প্রাক্কলন বলছে, ইউরোপের কারণে দেশটির কয়লার রপ্তানি চাহিদা প্রতি মাসে ৫০ হাজার টনে উন্নীত হতে পারে। অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ইউরোপের দেশগুলো প্রায় ৪০ শতাংশ কয়লা আমদানি করেছে। তানজানিয়ার প্রত্যাশা, চলতি বছর দেশটির কয়লা রপ্তানি দ্বিগুণ বাড়বে। রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৭৭৩ টনে। উত্তোলন ৫০ শতাংশ বেড়ে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টনে উন্নীত হতে পারে।

এশিয়া ও ওশেনিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চলতি অর্থবছর অস্ট্রেলিয়ার কয়লা রপ্তানি আয় ৭ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আয় ২৯ হাজার কোটি ডলারের রেকর্ড স্পর্শ করবে। এ বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে অস্ট্রেলিয়ার কয়লা ভারতের পরিবর্তে ইউরোপের বাজারেই বেশি ঢুকছে।

চীন চলতি বছরের প্রথমার্ধে ১৫ গিগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার নতুন প্লান্টের অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি তিন কোটি টন সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক লোহা কারখানারও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের শীর্ষ কয়লা রপ্তানিকারক। যেসব দেশ রাশিয়া থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, সেসব দেশে কয়লা সরবরাহ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া।

Source link

Related posts

রাশিয়াকে ‘ড্রোন তৈরিতে’ সাহায্য করবে ইরান

News Desk

ইউক্রেন অস্ত্রসমর্পণ করলে আলোচনায় বসতে রাজি রাশিয়া

News Desk

এক শহরের নিয়ন্ত্রণের দাবি রাশিয়া ও ইউক্রেন দুপক্ষেরই

News Desk

Leave a Comment