ছবি: সংগৃহীত
করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর মোড়ল দেশগুলোর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা বিশ্বকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এরইমধ্যে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে ছোট-বড় সব দেশের। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি হবে। এ সংকট থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকার প্রধানদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ।
বিশ্ব জুড়ে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হলে বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক এ দুই সংস্থা। তারা জানিয়েছে, এরইমধ্যে বিশ্বে ৪৮টি দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ চরম খাদ্য সংকটে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কয়েক মাস ধরে আগামী বছর বিশ্বমন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন।
ওয়াশিংটনে গত ১৩ অক্টোবর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলো। পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এটি বিপজ্জনকভাবে বৈশ্বিক মন্দার খুব কাছাকাছি। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বমন্দা হতে
পারে।’ তিনি বলেন, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মূলধন হ্রাস পাবে। এগুলো দরিদ্রদের ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটাই ব্যাংকব্যবস্থার মারাত্মক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
ডেভিড ম্যালপাস বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোয় অর্থপ্রবাহ কমায় মানুষের হাতে নগদ অর্থও কমেছে। আমাদের এখন গরিবদের জন্য চিন্তা করতে হবে। বিশ্বব্যাংকও তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিশ্বজুড়ে ‘মন্দার ঝুঁকি বাড়ছে’ এবং বিশ্ব অর্থনীতি একটি ‘ঐতিহাসিক ভঙ্গুরতার সময়কাল’ এর মুখোমুখি হচ্ছে। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের বৈঠকের সময় তিনি এই সর্তকবার্তা দেন।
আইএমএফ প্রধান তথ্য তুলে ধরে বলেন, আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ২.৭% আশা করছে, যা জুলাই মাসের ২.৯ শতাংশ থেকে কম। আইএমএফ পূর্ভাবাস দিয়েছে যে, বিশ্ব অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি আগামী বছরে পরপর দুই-চতুর্থাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখতে পাবে।
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে দেয়া বক্তৃতায় জর্জিয়েভা বলেন, ‘একাধিক ধাক্কা, তার মধ্যে আবার বুদ্ধিহীন যুদ্ধ অর্থনৈতিক চিত্রকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। অস্থায়ী হওয়ার বদলে মুদ্রাস্ফীতি আরো স্থায়ী হয়েছে।’ বিশ্বের অর্থনৈতিক দুর্দশার একটি ভয়াবহ প্রতিকৃতির বর্ণনা করে তিনি বলেন, বর্তমানে রাশিয়ান গ্যাসের মূল্য টের পাচ্ছে ইউরোপ, গভীর মন্দার সম্মুখীন হচ্ছে চীনের বাজার, মুদ্রাস্ফীতি আর ক্রমবর্ধমান সুদের হার ভোক্তাদের মনে সংশয়ের সৃষ্টি করছে এবং বিনিয়োগ আটকে দেয়ার কারণে মার্কিন অর্থনীতিও গতি হারাচ্ছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দেয়া সূচনা বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সফরের সময় আমি অনেক বিশ্বনেতা ও সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রত্যেকেই খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। তারা মনে করেন যে, ২০২৩ সাল একটি খুব ভয়াবহ বছর হবে। এ বছরে খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ হতে পারে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সবাইকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।
এমকে