Image default
আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে সেনাবাহিনী বনাম ইমরান খান বিরোধ প্রকাশ্যে

পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

শুধু পাকিস্তান নয়; বিশ্বের ইতিহাসে রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর সংবাদ সম্মেলন এটাই প্রথম। নজিরবিহীন এই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার (আই এস আই) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আনজুম। তার সঙ্গে ছিলেন সেনাপ্রধানের মুখপাত্র ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল বাবর ইফতিখার। গত বৃহস্পতিবারের ওই সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দাপ্রধান বলেছেন, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার সরকারকে অসাংবিধানিকভাবে সমর্থন দিতে সেনাবাহিনীকে বলেছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনী রাজি হয়নি। কারণ তারা রাজনীতি করে না এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকতে চায়। এর মাধ্যমে দেশটিতে সেনাবাহিনী ও ইমরান খানের মধ্যে তীব্র বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলো।

অবশ্য ছেড়ে কথা বলেননি পিটিআই নেতারাও। গতকাল শুক্রবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে পিটিআই বলেছে, সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি অরাজনৈতিক হয় তাহলে কেন তারা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে। আইএসপিআরের প্রধানকে প্রশ্ন করে ইমরান বলেন, সেনাবাহিনী যদি অরাজনৈতিক হয় তাহলে এই সংবাদ সম্মেলন করার কী দরকার ছিল? আপনাদের বক্তব্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে, আপনারা কিভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এবং আপনারা রাজনীতিতে জড়িত কিনা? গত এপ্রিলে তার সরকারকে উৎখাত করতে সেনাবাহিনী ষড়যন্ত্র করেছিল বলে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ করেছেন ইমরান খান।

পাকিস্তানের রাজনীতির কলকাঠি বরাবরই ছিল দেশটির সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের হাতে। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। পাকিস্তানের স্বাধীনতার সাড়ে সাত দশকের মধ্যে তিন দশকের বেশি সময় দেশটির সরাসরি শাসনক্ষমতায় ছিল সেনাবাহিনী। বেসামরিক ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থাকলেও পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এই সংস্থাটি রাজনীতির চাইতে গোয়েন্দাগিরিতে পরিপক্ক। এদের অতি নজরদারির কারণে এই পর্যন্ত কোনো সরকার তার নিজের অবস্থান থেকে দেশ পরিচালনা করতে পারেনি।

ক্ষমতা ছাড়ার আগে-পরে সেনাবাহিনীকে ঘায়েল করে একের পর এক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন ইমরান খান। অনেকদিন এ নিয়ে মুখ খোলেনি সেনাবাহিনী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ইমরান খানের জবাব দিয়েছে।

পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা বলছেন- জবাব নয়, রীতিমতো ইমরান খানকে কটাক্ষ করেছে সেনাবাহিনী। ইমরান খানকে উদ্দেশ্য করে জেনারেল নাদিম আনজুম বলেছেন, তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে রাতে সাক্ষাৎ করে ক্ষমা চান। আর দিনের বেলায় বলেন, বিশ্বাসঘাতক, মীরজাফর ও দেশদ্রোহী। আইএসআই ডিজি আরো বলেন, যদি কমান্ডার ইন চিফ (সেনাপ্রধান) রাষ্ট্রদ্রোহী হন, তাহলে আপনি কেন গোপনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন? জেনারেল আনজুম আরো বলেন, ইমরান খান ক্ষমতায় টিকে থাকতে সেনাবাহিনীর সমর্থন চেয়েছিল। এমনকি ইমরান খান নিজের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবকে ব্যর্থ করার জন্য সেনাপ্রধানের সাহায্য চেয়েছিলেন এবং এতে তিনি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত সেনা প্রধানকে ক্ষমতায় থাকতে বলেছিলেন। তিনি আবারো প্রশ্ন রাখেন, যদি আপনার চোখে সেনাপ্রধান একজন দেশদ্রোহী হন, তাহলে কেন তার মেয়াদ বাড়াতে চেয়েছিলেন? কেন এখনো গোপনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন? আইএসআই ডিজি আরো বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা সংবিধানের পক্ষে কঠোর অবস্থানে থাকব। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সঙ্গে ওইসব সদস্যও জড়িত ছিলেন, যারা আগামী ১৫ থেকে ২০ বছর সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন। সংবাদ সম্মেলনে আইএসআই ডিজি আরো জানান, তিনি দেখতে পেয়েছেন অব্যাহতভাবে মিথ্যা বলা হচ্ছে। সেসব মিথ্যাকে গ্রহণ করা হচ্ছে। এটা দেখার পর তিনি বাধ্য হয়েছেন প্রকাশ্যে এসে কথা বলতে। আনজুম বলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর রাজনীতি বাইরে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
আইএসআইপ্রধান সাধারণত জনসম্মুখে আসেন না। সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য তিনি বলেননি, ইমরান কোথায় এমন অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আনজুম বলেছেন অতীতে সেনাবাহিনী ভুল করেছে। তবে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সেনাবাহিনীর এই সংবাদ সম্মেলনের জবাবে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) সিনিয়র নেতারাও সংবাদ সম্মেলন করেছেন লাহোরে। এতে উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র নেতা আসাদ উমর, শাহ মেহমুদ কুরেশি, ফাওয়াদ চৌধুরী প্রমুখ। আইএসআই ও আইএসপিআরের বক্তব্য সম্পর্কে তারা বলেছেন, নতুন ‘প্যান্ডোরার বাক্স খোলা হয়েছে’।

ইমরান খানের লং মার্চ : গতকাল শুক্রবার লাহোর থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন ইমরান। মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে এই লং মার্চকে ‘হকিকি আজাদি লং মার্চ’ নামে ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই। পাকিস্তানের সরকার বলছে নির্ধারিত সময় আগামী বছরের অক্টোবরে নির্বাচন হবে।

গতকাল ডন পত্রিকার এক বিশ্লেষণে আব্দুর জাফরি বলেছেন, দু’পক্ষের মধ্যে কিভাবে বিষয়টি মীমাংসা হবে তা এই পর্যায়ে বলা কঠিন। সেনাবাহিনী আদতে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চায় নাকি আরো বেশি করে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট থাকতে চায়? ইতিহাস থেকে জানতে হবে, দশকের পর দশক ধরে যেভাবে সামরিক এস্টাবলিশমেন্ট বারবার রাজনৈতিক ও বেসামরিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। তা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আসলেই কি এসছে? তিনি আবার নিজেই এর উত্তরে বলেন, এটা ঠিক যে পাকিস্তানের জনগণ সবসময় তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে ভালোবাসে এবং তা অব্যাহত রাখবে, তবে তাদের ভালোবাসাকে নিঃশর্ত বিবেচনা করা উচিত নয়।

Source link

Related posts

সেনা মোতায়েন নিয়ে উত্তেজনা: রাশিয়ায় বসবাসকারী ইউক্রেনীয়রা কী ভাবছেন

News Desk

দেশে দেশে জমকালো আয়োজনে বর্ষবরণ

News Desk

ইউক্রেনের অধিকৃত ৪ অঞ্চল অন্তর্ভুক্তির বিল পার্লামেন্টে তুললেন পুতিন

News Desk

Leave a Comment