Image default
আন্তর্জাতিক

নতুন নতুন সংকটে ন্যাটো : শঙ্কা বাড়ছে কিয়েভে

ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের আকাশে ঘন হচ্ছে যুদ্ধের কালো মেঘ। চলতি বছরে যারা যুদ্ধে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিল তারা ক্রমেই হাত গুটিয়ে নিচ্ছে বা নিজেদের দ্ব›েদ্ব নিজেরাই বেহাল অবস্থায় পড়েছে। বিশেষ করে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ন্যাটো সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে আছে তারাই এখন আর্থিক ও জ¦ালানি সংকটে দিশাহারা। তাই আসছে বছরের শুরুতেই ইউক্রেনের ওপর ক্রেমলিনের যুদ্ধ পরিকল্পনা কী হবে না হবে তা নিয়ে কিয়েভের উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে।

একমত হতে পারেনি ইইউ : কূটনীতিকরা বলছেন, ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় মিত্র ইইউ। গত ১৫ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার একটি নবম প্যাকেজ নিয়ে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে। বছরের শেষে এই আলোচনায় নিজেদের মধ্যে একমত হতে পারেনি এটাকে ক্রেমলিন কূটনীতির একটি বড় জয় বলে মনে করা হচ্ছে। একজন ইইউ কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মস্কোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো ইউরোপীয় বন্দরগুলোর মধ্য দিয়ে রাশিয়ান সার রপ্তানি করা সহজ করা উচিত কিনা তা নিয়ে মতবিরোধের কারণে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে।

রাশিয়া ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চায় : ইউক্রেনে প্রায় ১০ মাস যুদ্ধের পর ইউক্রেনের মিত্ররা রাশিয়ার কাছ থেকে একটি ‘ক্রিসমাস যুদ্ধবিরতি’ আশা করেছিল। কিন্তু রাশিয়া এটা প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু তাই নয়, ক্রিসমাস উপহার হিসেবে মার্কিন প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই হবে হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তু।

ইউক্রেনে মারাত্মক অবনতি : জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে ইউক্রেনের অবকাঠামোতে আরো হামলা হলে মানবিক পরিস্থিতির ‘মারাত্মক অবনতি’ ঘটাতে পারে এবং মানুষ আরো বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে আঘাত হানা হবে : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমায় নিক্ষেপ করা যুক্তরাষ্ট্রের ‘লিটল বয়’ পরমাণু বোমার চেয়ে ১২ গুণ বেশি শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে মস্কো। দূরপাল্লার এ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও আঘাত হানতে সক্ষম। ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেয়া হবে-বাইডেন প্রশাসনের এমন

পরিকল্পনার খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই মস্কো এ ব্যবস্থা নিয়েছে। রুশ দৈনিক কসমোল্লায়া প্রাভদার খবরে বলা হয়েছে, আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আরএস-২৪ ইয়ার্সের পাল্লা প্রায় ৭ হাজার ৫০০ মাইল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে জাপানের হিরোশিমায় মার্কিন বাহিনী ‘লিটল বয়’ নামের যে ধ্বংসাত্মক পরমাণু বোমা ফেলেছিল, আরএস-২৪ ইয়ার্সের ক্ষমতা তার ১২ গুণ।

চীনের সঙ্গে ন্যাটোর দ্ব›দ্ব : যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আটলান্টিক মহাসাগরের দুই তীরের দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো উদীয়মান পরাশক্তি চীনের সঙ্গে নতুন দ্ব›েদ্ব নামছে কিনা তা বিশ্লেষণ করছে আন্তর্জাতিক মহল। স¤প্রতি রোমানিয়ার বুখারেস্টে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুদিনের সম্মেলেনে দীর্ঘসময় আলোচনা হয়েছে চীনকে নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনকে নিয়ে তারা যে আশঙ্কা-শঙ্কার দোলাচলে ভুগছে তা ন্যাটোতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ প্রচেষ্টায় জো বাইডেন প্রশাসন আংশিকভাবে হলেও সফল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ঘোষণা দিয়েছে, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যকে কঠিন করে তুলতে বিভিন্ন বিধিনিষেধও আরোপ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

হিতে বিপরীত হতে পারে : তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর এমন পরিকল্পনা হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, চীনের উত্থান যতই যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর মাথাব্যথার কারণ হোক না কেন, চীনের সঙ্গে তাদের সরাসরি প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জড়িয়ে পড়া ঠিক হবে না। ইউরোপ-আমেরিকার গণ্ডি ছেড়ে এশিয়ায় এসে ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের অন্যতম নিয়ামক হয়ে ওঠা ন্যাটোর জন্য মঙ্গলজনক হবে না, বিশেষ করে ইউরোপের নিরাপত্তাই যেখানে টালমাটাল। বিগত কয়েক বছর ধরে চীনের ক্রমাগত উত্থানের বিপরীতে ন্যাটো ক্রমশ বেইজিংয়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে বদলে নিচ্ছে।

অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সক্ষমতার দিক থেকে ন্যাটো চীনকে টেক্কা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আবার এ জোটের দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বিশাল বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। দেশগুলো একটা সময় মনে করত, চীনের সঙ্গে তাদের এ সম্পর্ক হয়তো দেশটিতে স্বাধীনতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে পশ্চিমা মূল্যবোধ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বিষয়টি ইউরোপের নেতারাও বুঝতে পেরেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তো একধাপ এগিয়ে ন্যাটোর এমন চাওয়াকে ‘শিশুসুলভ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ন্যাটো ঐতিহাসিকভাবেই চীনকে একটি প্রতিকূল শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। তবে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ব্যাপারে ন্যাটোর নীতি দ্ব্যর্থক। যেমন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ চীনকে একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ২০২২ সালে প্রকাশিত ন্যাটোর কৌশলগত ধারণাপত্রে চীনকে আবার প্রতিপক্ষ বলে উল্লেখ করা হয়। চীনের বৈশ্বিক নীতিকে ‘জবরদস্তিমূলক’ বলে আখ্যা দিয়ে স¤প্রতি মস্কো-বেইজিং সম্পর্ক নিয়ে ‘আশঙ্কা’ ব্যক্ত করে পুরো একটি অনুচ্ছেদই রচনা করা হয়েছে।

ব্যয়বহুল হবে ব্যাটলগ্রাউন্ড : বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত ৭৫ বছরের ইতিহাসে ইউরোপ বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ একটি যুদ্ধের (ইউক্রেন যুদ্ধ) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালেও হয়তো যুদ্ধ চলতে থাকবে। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে ন্যাটোর উচিত হবে নিজেদের সংকট নিরসনেই বেশি মনোযোগ দেয়া এবং কোনোভাবেই চীনকে নিজেদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় না করানো।

এছাড়া ন্যাটো নিজেই নানাবিধ সমস্যায় ডুবে আছে। এর একটি হলো বাজেট। যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে ন্যাটোর বাজেটের ৭০ শতাংশ পূরণ করে। ফলে জোটটির অনেক নীতিও নির্ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি পূর্ণাঙ্গ একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ন্যাটোর অন্য সদস্য দেশগুলো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতেও সক্ষম নয়। তাই চীনের মতো একটি শক্তির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে একাধিক ফ্রন্টে ন্যাটো কীভাবে অবদান রাখবে তা অস্পষ্ট।

কেএইচ

Source link

Related posts

বউমাকে জড়িয়ে শাশুড়ি বললেন ‘তোমারও করোনা হোক’

News Desk

রাইসিকে ‘জল্লাদ’বলে বিশ্বকে সতর্ক করলেন নাফতালি বেনেট

News Desk

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান

News Desk

Leave a Comment