Image default
আন্তর্জাতিক

তিন সংকটের মুখে বিশ্ব অর্থনীতি

করোনা বিধিনিষেধের অর্থ, অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব। ২০২২ সালে কি তেমন পরিস্থিতি আবার ফিরে আসবে, সম্ভবত এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

  • পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, বছরের শেষ প্রান্তে আমেরিকার মূল্যস্ফীতির হার থাকবে ২ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে সেই হার গিয়ে ঠেকেছে ৭ শতাংশে।

 

কোভিড মহামারির দুই বছর পূর্ণ হতে চলেছে, কিন্তু এখনো এই মহামারি থেকে পাকাপাকিভাবে মুক্তির আভাস মিলছে না। এর মধ্যেই আবার শুরু হয়েছে ভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রনের প্রকোপ। চীনসহ বিশ্বের বড় অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতিপথই-বা কেমন হবে এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কি আরও নিম্নমুখী হবে, মূল্যস্ফীতি কি আকাশ ছোঁবে—আপাতত এসব প্রশ্ন নিয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, গত দুই বছর মহামারির দাপটে ম্রিয়মাণ থাকার পর ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতি মাথা তুলে দাঁড়াবে কি না।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে এই তিন বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের অর্থনীতির ভালোমন্দ।

এদিকে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন নিয়ে বিশ্বে তোলপাড় চলছে। আগের ধরনগুলোর তুলনায় অমিক্রন যে আরও বেশি ছোঁয়াচে, তা প্রাথমিকভাবে বোঝা গেছে। কিন্তু তার ধ্বংসকারী ক্ষমতা কি করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনের চেয়ে বেশি? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

অমিক্রন মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। করোনা বিধিনিষেধের অর্থ, অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব। ২০২২ সালে কি তেমন পরিস্থিতি আবার ফিরে আসবে, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

 

মূল্যস্ফীতি

পণ্য ও পরিষেবার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস—সাধারণ পরিভাষায় একেই বলে মূল্যস্ফীতি। বিশ্বজুড়ে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা কমার অর্থ, প্রান্তিক ও গরিব জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান আরও কমে যাওয়া। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতিদিন আমিষ খেতে পারে না। এখন মাছ-মাংসের দাম আরও বেড়ে গেলে তাদের আমিষ গ্রহণ কমানো ছাড়া গতি নেই। নিম্নগামী আয়ে টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমলে অর্থনীতি বাড়তি চাপে পড়ে, কমে বিস্তার। কোভিড ও অন্যান্য বিভিন্ন কারণে দুই বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে ভাটার টান, তার ফলেই এই মূল্যস্ফীতির বাড়বাড়ন্ত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটা সরবরাহের সংকটজনিত মূল্যস্ফীতি। সরবরাহসংকট কেটে গেলে পরিস্থিতির উত্তরণ হবে। কিন্তু অনেকেই আবার বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মূল্যস্ফীতির যুগে প্রবেশ করছে বিশ্ব।

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, বছরের শেষ প্রান্তে আমেরিকার মূল্যস্ফীতির হার থাকবে ২ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে সেই হার গিয়ে ঠেকেছে ৭ শতাংশে। ২০২২ সালেও এমনই কিছু কি অপেক্ষা করছে, তা নিয়েই এখন অর্থনীতিবিদেরা ভাবিত।

এদিকে আরেকটি বড় ঘটনা হলো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। টানা কিছুদিন বৃদ্ধির পর অবশ্য তেলের দাম এখন স্থিতিশীল হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, জ্বালানির দাম বাড়লে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে মানুষের পকেটে। এ ছাড়া নজর রাখার মতো বিষয় হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট। এই রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হলে গ্যাসের দামও বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

 

চীন

করোনা মহামারির অভিঘাত এড়াতে পারেনি চীন। স্থবিরতা নেমে এসেছে দুর্বার গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলা চীনা অর্থনীতিতে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, নির্মাণশিল্পে মন্দা, উপর্যুপরি করোনা বিধিনিষেধ ও রসদের ঘাটতি—এই তিন কারণই ছিল স্থবিরতার নেপথ্য কারণ, যার জেরে চীনের প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ থেকে নেমে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছিল।

অর্থনীতিবিদদের আশা, ২০২২ সালে রসদের ঘাটতি পূরণ হবে। কিন্তু বাকি দুই ক্ষেত্রে আগের শিখর ছুঁতে পারবে কি চীন, তা নিয়ে এখনো সন্দেহ আছে। সমস্যা হলো, চীনের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়লে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক দেশের অর্থনীতি গতি হারায়।

মূলত এই তিন বিষয় ছাড়াও বিশ্ব অর্থনীতির ভালোমন্দ নির্ভর করবে আরও বেশ কিছু রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর।

Related posts

এখন কোনো দেশকেই টিকা দেবে না ভারত

News Desk

ভারতে একদিনে করোনায় শনাক্ত কমলেও মৃত্যু ৪ হাজার ছাড়িয়েছে

News Desk

করোনামুক্তির ৪ দিনের মাথায় ফের আক্রান্ত বাইডেন

News Desk

Leave a Comment