জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর, কাজাখ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে চীন। সেখানে সব্বোর্চ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে দেশটি। জিনজিয়াংয়ের ১০ লাখের বেশি মুসলিমকে পাঠানো হয়েছে বন্দী শিবিরে। বৃহস্পতিবার চীনের উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ১৬০ পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
২০১৯-এর অক্টোবর থেকে ২০২১-এর মে পর্যন্ত ১২৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। তার মধ্যে ৫৫ জন চীনের উইঘুর বন্দী শিবিরে ছিলেন। বাকি ৬৮ জন নির্যাতিত পরিবারের সদস্য। গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, জিনজিয়াংয়ে ১০ লাখের বেশি মানুষকে বন্দী শিবিরে পাঠানো হয়েছে। অনেকের অভিযোগ, চীন মূলত জিনজিয়াং থেকে মুসলিমদের মুছে ফেলতে চায়।
উইঘুরদের অভিযোগ, জিনজিয়াংয়ে কিছু মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকী মসজিদ ও মুসলিমদের বাড়িতে লাগানো হয়েছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-য়ের ছবি। অনেকে বলছেন, চীনে তারা নিজেদের ধর্ম পালন করতে ভয় পাচ্ছেন। গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, শিবির থেকে সব বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। মানবতার বিরুদ্ধে চীনের এমন অপরাধ বন্ধে জাাতিসংঘসহ বিশ্ববাসিকে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে চীন এধরনের জঘন্য কাজ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
এদিকে চীনের নতুন জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির জন্য জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের জনসংখ্যা আগামী ২০ বছরে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। সম্প্রতি এমন তথ্য প্রকাশ করেছে জার্মানির একজন গবেষক। চীনের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় দুই সন্তান নীতি থেকে বেরিয়ে তিন সন্তান নীতি গ্রহণ করেছে দেশটি। একদিকে চীন চাচ্ছে নিজেদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাক। অন্যদিকে ভিন্ন নিয়ম অবলম্বন করা হচ্ছে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সঙ্গে।
সংখ্যালঘু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চীন নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। জিনজিয়াংয়ে বাসবাসকারী সংখ্যালঘুদের চাকরি বা কাজের সন্ধানে পাঠানো হচ্ছে বহুদূরের স্থানে। এমনকি অন্য প্রদেশেও পাঠানো হচ্ছে। যেন নিজেদের আবাস থেকে দূরে অবস্থান করতে হয় তাদের। এর পেছেনে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে, প্রথমত উইঘুর মুসলিমসহ অন্যান্যা সংখ্যালঘুদের জন্মহার কমানো। এছাড়া অন্য প্রদেশে পাঠিয়ে সেখানকার মানুষ তথা চীনের মূল হ্যান সংস্কৃতির সঙ্গে সংখ্যালঘুদের খাপ খাইয়ে নিতে বাধ্য করা।
এদিকে উইঘুরদের প্রতি চীনের নীতির সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। বেশি সন্তান জন্ম দেয়ার দায়ে আটক করার ঘটনাকে নিকৃষ্ট বলে উল্লেখ করেছে দেশগুলো। একই সঙ্গে জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের কনভেনশন অনুযায়ী, কোন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্ম নিয়ন্ত্রণ চেষ্টাকে গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীন। তাদের দাবি চীনকে অস্থিতিশীল করতে বাইরের দেশগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।