Image default
বিনোদন

বাংলাদেশি চিত্রশিল্পীর আন্তর্জাতিক পুরস্কার জয়

ফাওয়াজ রবের ‘লং ওয়াক হোম’ চিত্রটি পেনআর্ট আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছে। ফ্রান্স, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্ব থেকে ৮০ জন শিল্পীর মধ্যে তার চিত্র কর্মটিকে সেরা হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে।

‘আমি এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়ে খুব আনন্দিত’, ফওয়াজ রব বললেন। তিনি যোগ করেন, ‘তবে একজন শিল্পীর দায়িত্ব শুধু সুন্দর ছবি আঁকা নয়, তার দায়িত্ব সময়ের কথা বলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের অমানবিকরণ আমাদের সময়ের একটি বড় ট্র্যাজেডি।

রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি বা উইঘুরদের কৌশলগতভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি সম্মিলিতভাবে এদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুরস্কারের চাইতে বড় কথা, আমার শিল্প যদি রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের দিকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আনতে পারে তবে আমার উদ্দেশ্য সার্থক। এর জন্য যদি শিল্পী হিসেবে পাশ্চাত্যে অথবা চীনে প্রত্যাখ্যিত হতে হয়, তাতে কিছু যায় আসে না।’

শিল্পীর ভাষায় সদ্য পুরস্কার পাওয়া ‘লং ওয়াক হোম’ ছবিটির পেছনে দর্শন ছিলো- দশ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বার্মা ছেড়ে পালিয়ে আসাটা। তার ভাষ্যে, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, পরিবারের সদস্য নিহত হয়েছে, ফসল পুড়ে গেছে। এমতাবস্থায় জাতিসংঘ নিতান্তই নিথর। বার্মিজ সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে যখনই কোনো রেজোলিউশন আনা হচ্ছে, চীন সরকার সেটাতে ভেটো দিচ্ছে। আর এদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শরণার্থীর শিবিরে দিন গুনছেন।

অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের শুধুমাত্র ঠাই দেয়নি, তাদের অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান উদাসীনতা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।

সেইসঙ্গে তার ছবিতে উঠে এসেছে মুসলিমদের উপর নানা রকম অপবাদ ও নিপীড়নের বিষয়গুলো। তার দর্শন, ‘অবাক করা ব্যপার হলো পৃথিবীময় সৎ, শিক্ষিত সাধারন মানুষরা ৯/১১ এর পর থেকে মুসলিম জনগোষ্টিকে বিপজ্জনক হিসেবে দেখতে শুরু করে। দুঃখজনক সত্য হলো পৃথিবীর সাধারণ জনগন নিয়ন্ত্রিত তথ্যের শিকার। একটি বিশেষ শ্রেণি তাদের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে সাফল্যের সাথে সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করেন।

ফেসবুক নামক প্রচার মেশিনের কারখানাটি সর্বোচ্চ ক্রেতার কাছে বিক্রি হয়। শুধুমাত্র বার্মা নয়, ট্রাম্পের জয়ের পেছনেও এর চতুরতা কাজ করেছিল। আমাদের সময়ের ডিজিটাল অপরাধের বিশালতা একদিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হয়ত পড়ানো হবে। তবে রোহিঙ্গা বা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের কি তাতে কিছু আসে যায়? তারা বিশ্ববাসীর উপেক্ষায় ধুকে ধুকে মরছে।

আমরা সবাই বাড়ি ফিরতে চাই। রোহিঙ্গারা বাড়ি ফিরতে চান। তারা হাটতে হাটতে একটি বাড়ির কথা চিন্তা করেন যার অস্তিত্ব আর নেই । তারা হয়ত সেই বাড়িতে আর কোনদিনও ফিরে যেতে পারবেন না। কিন্তু সেই বাড়ির খোজে নিরন্তর হেটে চলা ‘লং ওয়াক হোম’।’

ফওয়াজ রব যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো এবং ইতালির ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করেছেন। তিনি একজন স্থপতি এবং দশ বছর ধরে এনএসইউ আর্কিটেকচার বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।

তার প্রথম একক প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল খোদ প্যারিসে এবং তার কথা উঠে এসেছিলো ‘লে প্যারিসিয়েন’ ম্যাগাজিনেও।

তিনি বাংলাদেশি প্রিন্টমেকারদের একজন সক্রিয় সদস্য এবং শত শত শিক্ষার্থীকে প্রিন্টমেকিং শিখিয়েছেন।

Related posts

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: ডলি জহুরকে নিয়ে অঞ্জনার আপত্তি

News Desk

বিবাহোত্তর সংবর্ধনার মাসখানেকের মাথায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করলেন সারিকা

News Desk

মা–বাবার কিছু হলে অনাথ হয়ে যাব: ইউক্রেনীয় বলিউড অভিনেত্রী

News Desk

Leave a Comment