Image default
জীবনী

যার অভিনয়ে ডুব দেয়া যায় অবলীলায় তিনি হলেন ইরফান খান

ইরফান খান (৭ জানুয়ারি ১৯৬৭ – ২৯ এপ্রিল ২০২০) ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তিনি তার অতুলনীয় ও অকল্পনীয় সহজাত অভিনয় ক্ষমতার জন্য পরিচিত। বলিউড, ব্রিটিশ ভারতীয়, হলিউড এবং একটি তেলুগু চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করছেন।৩৫ বছরের কর্মজীবনে তিনি ৫০টির অধিক দেশীয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও চারটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার-সহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। চলচ্চিত্র সমালোচক, সমসাময়িক অভিনয়শিল্পী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী বলে গণ্য করে থাকেন। ২০১১ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত করে।দেশীয় চলচ্চিত্রে বাইরে তিনি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে দ্য ওয়ারিয়র (২০০১), দ্য নেমসেক (২০০৬), দ্য দার্জিলিং লিমিটেড, একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র স্লামডগ মিলিয়নিয়ার (২০০৮), নিউ ইয়র্ক, আই লাভ ইউ (২০০৯), দি অ্যামেজিং স্পাইডার-ম্যান (২০১২), লাইফ অব পাই (২০১২), জুরাসিক ওয়ার্ল্ড (২০১৫), ও ইনফার্নো (২০১৬)। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তার অভিনীত চলচ্চিত্রসমূহ বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে $৩.৬৪ বিলিয়ন আয় করে। ২০১৮ সালে তিনি নিউরো এন্ডোক্রিন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন। সুস্থ্য হয়ে ফিরে এসে তিনি আংরেজি মিডিয়াম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। কিন্তু পুনরায় মলাশয়ের ক্যান্সারের জটিলতায় তিনি ২০২০ সালের ২৯শে এপ্রিল ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

 

জন্ম এবং প্রাথমিক জীবন

জয়পুর, রাজস্থান; ১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি। এক মুসলিম পাঠান পরিবারের ঘর আলো করে জন্ম নিল এক পুত্র সন্তান, নাম রাখা হল শাহাবজাদে ইরফান আলী খান। ইরফান খানের বাবার ছিল চাকার ব্যবসা।

বড় হয়ে ইরফান খান প্রথমে ক্রিকেটার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তারপর ছোটখাট ব্যবসার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। এরপর তিনি এম.এ কোর্সে ভর্তি হলেন। এম.এ কোর্সে পড়াশোনা চলাকালীন সময়েই ১৯৮৪ সালে ইরফানের কাছে আসে এক সুবর্ণ সুযোগ। তিনি নিউ দিল্লীর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপ সহ সুযোগ পেয়ে যান। সেখান থেকে তিনি ড্রামাটিক আর্টসে ডিপ্লোমা করেন।

 

অভিনয় জীবন

ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে পাস করার পর ইরফান খান মুম্বাইয়ে চলে এলেন। এখানে এসে তিনি টেলিভিশন সিরিয়াল দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করলেন, যদিও প্রথমদিকে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তিনি প্রথমদিকে টিউশনি করিয়ে এবং মানুষের বাসায় এসি ঠিক করে দিতেন। মুম্বাইয়ে আসার পর তিনি একে একে অভিনয় করলেন চাণৌক্য, ভারাত এক খোঁজ, সারা জাহা হামারা, বানেগী আপনে বাত, চন্দ্রকান্ত, শ্রীকান্ত, আনুগুঞ্জ, স্টার বেস্টসেলারস ও স্পার্স নামক টিভি সিরিয়ালে। এর অনেকগুলোই ছিল দূরদর্শন এবং স্টার প্লাসের মত বড় বড় টিভির সিরিয়াল। স্টারপ্লাসের ‘ডার’ নামক এক সিরিজের প্রধান ভিলেন ছিলেন ইরফান। এতে তিনি কে কে মেননের বিপরীতে এক সাইকো সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এভাবে তিনি থিয়েটার আর টিভি সিরিয়ালের মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছিলেন।১৯৮৮ সালে এসে তার ক্যারিয়ার নতুন দিকে মোড় নেয়া শুরু করে। ডিরেক্টর মিরা নায়ের তাকে তার সিনেমা সালাম বোম্বেতে একটি অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল তার চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত ফিল্মের এডিটিংয়ে বাদ চলে যায়। সালাম বোম্বে সিনেমাটি পরে ইন্ডিয়া থেকে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। সিনেমাটি ইন্ডিয়ার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জিতেছিল। তবে সিনেমার এডিটিংয়ে তার চরিত্র বাদ পড়লেও ইরফান খান থেমে থাকলেন না।

১৯৯০-২০০০ এর মাঝে এমন কিছু সিনেমা তিনি আমাদের উপহার দিলেন যা সমালোচকদের মতে বেশ ভালোভাবেই উতরে গিয়েছিল। এর মাঝে ছিল এক ডক্টর কি মউত এবং সাচ আ লং জার্নি সিনেমা দুটি। এছাড়াও আরো কিছু সিনেমায় তিনি এ সময় অভিনয় করেন যা বক্স অফিসে একদমই মুখ থুবরে পড়েছিল।

ইরফান খান তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে ভিন্নধর্মী সিনেমা করার চেষ্টা করতে থাকলেও তার ঝুড়িতে একের পর এক ফ্লপ সিনেমা সংযুক্ত হতে থাকল। কিন্তু হঠাৎই দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে যায়। ব্রিটিশ ফিল্ম ডিরেক্টর আসিফ কাপাডিয়া তাকে তার “দ্য ওয়ারিয়র” সিনেমার জন্য প্রধান চরিত্রে মনোনীত করলেন। আসিফ কাপাডিয়া সে সময় ছিলেন কান ফিল্ম ফেস্টিভালে পুরস্কার পাওয়া পরিচালক। পরবর্তীতে তিনি বাফটা অ্যাওয়ার্ড, অস্কার বা একাডেমী অ্যাওয়ার্ড, এমনকি গ্র্যামী অ্যাওয়ার্ডও জয় করেন। তার নির্মিত “অ্যামি” সিনেমাটি যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ডকুমেন্টারি ফিল্ম।

“দ্য ওয়ারিয়র” ছিল ইতিহাসভিত্তিক একটি সিনেমা। সিনেমাটি বানাতে ১১ সপ্তাহ সময় লেগেছিল। সিনেমাটির পুরো শ্যুটিং হয়েছিল ভারতের হিমাচল প্রদেশ ও রাজস্থানে। ২০০১ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে দ্য ওয়ারিয়র মুক্তি পায়। বাফটা অ্যাওয়ার্ডে এটি সেরা ব্রিটিশ ফিল্মের পুরস্কার জিতে নেয়। অস্কারের জন্য যুক্তরাজ্য থেকে যে সিনেমাটি পাঠানো হবে, তার সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও এই সিনেমাটি জায়গা পেয়েছিল। এরপরই ইরফান রাতারাতি এক পরিচিত মুখ হয়ে যান।

২০০৪ এ খান রোড টু লাদাখ নামে একটি শর্টফিল্মে অভিনয় করেন তিনি। এই শর্টফিল্মটি আন্তর্জাতিকভাবে বেশ প্রশংসিত হয়। এর ফলে এই শর্টফিল্ম থেকেই পরিচালক একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ করেন, যাতে ইরফান খান প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছরে তিনি মকবুল নামে আরেকটি সিনেমায় অভিনয় করেন। এটি ছিল শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথের অ্যাডাপ্টেশান। এতে তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এই সিনেমাটিও সমালোচকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। ২০০৪ সালে বলিউডের হাসিল নামের আরেকটি সিনেমায় তিনি ভিলেনের চরিত্রে অবতীর্ণ হলেন। সিনেমাটিতে তার অভিনয় সমালোচকদের বিস্ময়ে স্তব্ধ করে দেয়। এই সিনেমার জন্য ইরফান ফিল্মফেয়ার সেরা ভিলেনের পুরস্কার জিতে নেন।

সমালোচকদের পছন্দের সিনেমা বা আর্ট ফিল্মের বাইরে সত্যিকার অর্থেই বলিউডের কোন মুভিতে প্রধান চরিত্রে ইরফান প্রথম অভিনয় করেন ২০০৫ সালে। সিনেমাটির নাম ছিল “রগ”। এই সিনেমায়ও ইরফানের অভিনয় সমালোচকদের মন জয় করে নেয়। এক সমালোচকের মতে, “সিনেমাটিতে ইরফানের চোখ তার শব্দের চেয়েও বেশি কথা বলেছে।”

২০০৭ সালে অনুরাগ বসুর লাইফ ইন আ মেট্রো সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন। সিনেমাটি ইন্ডিয়ার বক্স অফিসে ঝড় তোলে এবং হিট হয়। এই সিনেমার জন্য ইরফান খান ফিল্মফেয়ার, আইফা এবং স্টার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন।

২০০৮ সালে ইরফান খান স্লামডগ মিলিয়নিয়ারে এক পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সিনেমাটি বেস্ট পিকচার, বেস্ট ডিরেক্টরসহ ৮টি ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতে নেয়। এছাড়া ৭টি বাফটা অ্যাওয়ার্ড ও ৪টি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডও আছে এই সিনেমার ঝুড়িতে। এই সিনেমার জন্য তিনি এবং সিনেমার অভিনেতারা স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং পারফর্মেন্স বাই আ কাস্ট ইন আ মোশান পিকচার অ্যাওয়ার্ড জয় করেন।

স্লামডগ মিলিয়নিয়ারের অস্কারজয়ী পরিচালক ড্যানি বয়েল ইরফান খান সম্বন্ধে বলেছেন, “ইরফান একই অভিনয় বারবার একইরকম নিখুঁতভাবে করতে পারেন। এটা দেখতে পারা সত্যিই অসাধারণ।”

২০০৯ সালে ইরফান খান অ্যাসিড ফ্যাক্টরি নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। এটি অ্যাকশনধর্মী সিনেমা ছিল। তিনি সিনেমাটি করার পর বলেছিলেন ভবিষ্যতে আরো এরকম অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় অভিনয় করতে চান।

এ বছরই ইরফান নিউইয়র্ক এবং নিউইয়র্ক, আই লাভ ইউ নামের দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ইরফান। নিউইয়র্ক সিনেমায় তিনি এফবিআই এজেন্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সিনেমাটি বক্স অফিসে হিট হয়। ২৩ কোটি রুপির বাজেটের বিনিময়ে সিনেমাটি বক্স অফিসে ৬৫ কোটি রুপির ব্যবসা করে। কায়রো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল এবং পুসান ইন্টারন্যাশনাল ফিম ফেস্টিভালেও সিনেমাটির স্ক্রিনিং হয়।

২০০৮ এবং ২০০৯ সালে তাকে তার নামের কারণে ২ বার আমেরিকার এয়ারপোর্টে সন্ত্রাসী সন্দেহে আটক করা হয়েছিল।

২০১১ সালে ইরফান খানকে ভারত সরকার তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে। পদ্মশ্রী ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা।

২০১২ সালে হলিউড মুভি দ্য অ্যামাজিং স্পাইডারম্যানে ইরফান খান ড. রাজিত রাথা চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি হলিউডের সিনেমা লাইফ অব পাইয়ের পাই চরিত্রটির পূর্ণবয়স্ক চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। লাইফ অব পাই অ্যাকাডেমী অ্যাওয়ার্ড বা অস্কারে ১১টি ক্যাটাগরীতে মনোনয়ন লাভ করেছিল, যা ২০১২ সালে অন্য যেকোনো সিনেমার চেয়ে বেশি ছিল। চারটি ক্যাটাগরীতে অস্কার পুরস্কারও জিতে নিয়েছিল ছবিটি। তিনটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়ে বেস্ট অরিজিনাল স্কোরের জন্য একটি গোল্ডেন গ্লোব জেতে সিনেমাটি। এছাড়াও এই সিনেমা ২টি ব্রিটিশ অ্যাকাডেমী ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডও জিতেছে।

২০১৩ সালে তিনি দ্য লাঞ্চ বক্সের জন্য এশিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৪ সালে তিনি গুন্ডে সিনেমায় অভিনয় করেন। সিনেমাটি বক্স অফিসে সফল হয়। সেই বছরই তিনি দ্য এক্সপোজ ও হাইদার সিনেমায় শক্তিশালী অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

২০১৫ সালে ইরফান খান অমিতাভ বচ্চন ও দীপিকা পাড়ুকোনের সাথে পিকু সিনেমায় প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন। ৩৮ কোটি রুপির বাজেটে নির্মিত সিনেমাটি বক্স অফিসে ১৪১ কোটি রুপির ব্যবসা করে। এভাবেই ইরফান খান শুধু তার অভিনয় দিয়ে সমালোচকদের মন জয় করেননি, বক্স অফিসেও ছোট ছোট সিনেমা দিয়ে রাজত্ব করতে শুরু করলেন।

২০১৫ সালে ইরফান খান জুরাসিক ওয়ার্ল্ড নামের হলিউডের সিনেমাটিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। সিনেমাটি বক্স অফিসে বিশাল সাফল্য পায়। সেই বছরই ঐশ্বরিয়া রায়ের সাথে জাজবা নামের একটি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন যা সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা কুড়াতে সমর্থ হয়।

এছাড়াও ২০১৬ সালে ড্যান ব্রাউনের ইনফার্নো বইয়ের কাহিনী অনুকরণে বানানো সিনেমা ইনফার্নোতেও ইরফান খান অভিনয় করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি জাপানিজ টিভি সিরিজে অভিনয় করছেন।

চলচ্চিত্রের বাইরে অন্যান্য টিভি শো

বলিউডে চরম সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও ইরফান খান তার টেলিভিশন ক্যারিয়ারের ইতি টানেননি। তিনি ২০০৭ সালে স্টার ওয়ানের মানো ইয়া না মানো এবং প্রায় একইরকম আরেকটি টিভি শো কেয়া কাহুর উপস্থাপক ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি এইচবিও’র ইন ট্রিটমেন্ট নামক সিরিজের ৩য় সিজনে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও তিনি মাঝে মাঝে সিনেমার প্রযোজকের ভূমিকাও পালন করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫, ইরফান খান লেখিকা এবং ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার স্নাতক সুতপা শিকদারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সুতপা শিকদার ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় তার সহপাঠী ছিল। বাবলি এবং অয়ন নামে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। স্ত্রী তার সম্বন্ধে বলেছেন, “ইরফান সবসময় অত্যন্ত মনোযোগী। সে যখন বাসায় আসে, তখন সোজা শোবার ঘরে চলে যায় এবং মেঝেতে বসে বই পড়তে শুরু করে। পরিবারের বাকি সবাই গল্পগুজব আর মজা করতে ব্যস্ত থাকলেও সে সেদিকে মনোযোগী নয়।”

ইরফান রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে থেকে অভিনয় চর্চা করেন এবং নিয়মিত তার সিনেমার স্ক্রিপ্ট পড়েন। ২০১২ সালে ইরফান খান তার নামের বানান “Irfan” থেকে পরিবর্তন করে “Irrfan” রাখেন। এ সম্বন্ধে তিনি বলেন তার নামের অতিরিক্ত “r” এর শব্দ তার ভালো লাগে।

উল্লেখযোগ্য অর্জন

  • ২০১১ সালে ইরফান খান ভারতের ৪র্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক পদ্মশ্রীতে ভূষিত হন।
  • ২০১২ সালে ইরফান খান তার পান সিং তোমারের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন।
  • ২০১৫ সালে ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভালে পিকুর জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।
  • ২০১৩ সালে দ্য লাঞ্চ বক্সের জন্য এশিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন।
  • ২০১৩ সালে দ্য লাঞ্চ বক্সের জন্য তিনি এশিয়া প্যাসিফিক ফিল্ম ফেস্টিভালে আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
  • দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে তিনি দ্য লাঞ্চ বক্সের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন।
  • তিনি ২টি আইফা অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী, যার ১টি আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাচিভমেন্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল সিনেমার জন্য।
  • ২০১৩ সালে পান সিং তোমারের জন্য তিনি টাইমস অভ ইন্ডিয়া সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতেন
  • তার ২টি স্টার গিল্ড অ্যাওয়ার্ড রয়েছে
  • ২০১৩ সালে তিনি পান সিং তোমারের জন্য সেরা অভিনেতার ক্যাটাগরীতে স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড জেতেন।
  • তিনি ২০১২ সালে সিএনএন-আইবিএন ইন্ডিয়ান অভ দ্য ইয়ার পুরস্কার জেতেন।
  • তিনি ২০০৮ সালে স্লামডগ মিলিয়নিয়ারের জন্য স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং পারফর্মেন্স বাই আ কাস্ট ইন আ মোশান পিকচার পুরস্কারটি জয় করেন।
  • এছাড়াও তার ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্পিরিট অ্যাওয়ার্ড, স্টারডাস্ট অ্যাওয়ার্ড, আইফা অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, এশিয়া পাসিফিক অ্যাওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে আরো ১টি করে নমিনেশান রয়েছে।
  • তিনি বলিউডের একমাত্র অভিনেতা যার দুইটি ভিন্ন ছবি অস্কারে পুরস্কার জিতেছে।

ইরফান খান একজন শক্তিমান অভিনেতার নাম। সমালোচক, অভিজ্ঞ এবং অন্যান্য শিল্পীদের মতে, তিনি শুধু ভারতীয় সিনেমার নয়, গোটা বিশ্বের একজন অন্যতম সেরা, অনন্য সাধারণ এবং মেধাবী অভিনেতা। ১৯৮৮ সাল থেকে বহু পরিশ্রম আর উত্থান-পতনের পর নিজেকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তিনি। ৫০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ইরফান।

২০১৮ সালে বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত হন ইরফান খান। দুটো বছর লড়াইয়ের পর ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল অবশেষে চলে যান তিনি। তবে তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য ভক্তদের প্রেমের জটিল মানসে ঠিকই বেঁচে থাকবেন তিনি। ভক্তদের ভালোবাসা নিশ্চয়ই থাকবে তার সাথে। এই শক্তিমান শিল্পীর অভিনয় আমাদের মোহাবিষ্ট করে রাখুক অনন্তকাল। ধন্যবাদ ইরফান খান!

 

Related posts

ফুটবল খেলাটাকেই আমূল বদলে দেওয়া ইয়োহান ক্রুইফ

News Desk

সাড়ে তিন শ টাকার শাড়িতে বিবি রাসেল

News Desk

খালেদ মাহমুদ সুজন :বাংলাদেশ ক্রিকেটের “ফাইটার”

News Desk

Leave a Comment