Image default
জীবনী

বলিউডের নারী মহাতারকা শ্রীদেবীর জীবনের গল্প

শ্রীদেবী একটি নাম, লাখো ভক্তের বুকের গহীনে লালন করা এক প্রেয়সীর মুখ। যে মুখ কখনও পুরনো হয় না। যায় না হারিয়ে। তারপরও শ্রীদেবী হারিয়ে গেলেন চিরতরে জীবনের নিয়মে। রেখে গেলেন অবিস্মরণীয় কিছু চলচ্চিত্র, যেগুলোর কথা মানুষ মনে রাখবে। তিনি বেঁচে থাকবেন ভক্তের হৃদয়ে। ভারতের সিনেমা ইতিহাসে শ্রীদেবীর নাম গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হবে।

শ্রীদেবী
শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার আয়াপ্পান (শ্রীদেবী) ; ছবি : indiantoday

ভারতের তামিলনাড়ুতে জন্মেছেন এই অভিনেত্রী। হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম ও কন্নড় ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। শিশু বয়স থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত অভিনয় করে গেছেন। তাকে বলিউডের নারী মহাতারকা বলা হয়। ভারতের তামিলনাড়ুর শিবকাসিতে জন্ম হয় শ্রীদেবীর, ১৯৬৩ সালের ১৩ আগস্ট। তার আসল নাম শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার আয়াপ্পান । তার বাবা আইয়াপান আইনজীবী। মায়ের নাম রাজেস্বরী। শ্রদেবীর এক বোন শ্রীলতা। তার বৈমাত্রেয় ভাই আছে দুজন সাতিশ ও আনন্দ।

ব্যক্তিগত জীবন

শ্রীদেবী ১৯৯৬ সালে ২ জুন বনি কাপুরকে বিয়ে করেন। ঘোষণা করেন পরের বছর জানুয়ারি মাসে। তাদের ঘরে আছে দুই মেয়ে জাহ্নবী ও খুশি। অনেক সূত্র জানা যায় যে, শ্রীদেবী’র সাথে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে এ সম্পর্ক বজায় ছিল যা শ্রীদেবী পরবর্তীতে সম্পর্ক ছেদ করেন। এর প্রধান কারণ ছিল – প্রথম স্ত্রী যোগীতা বালীকে মিঠুন কর্তৃক বিবাহ-বিচ্ছেদ না ঘটানো। তারা অত্যন্ত গোপনে বিয়ে করেছিলেন বলে জানা যায়, যদিও তা পরবর্তীতে অস্বীকার করা হয়।

চিত্রকার শ্রীদেবী

ছবি আঁকায় পটু বলিউডের অভিনেত্রী শ্রীদেবী। ২০১০ সালে তাঁর আঁকা ‘থটস’ শিরোনামের চিত্রকর্ম নিলামে তুলতে চেয়েছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পকর্ম নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টি’স অকশন। এ ছাড়া, ‘দশ কা দম’ টিভি অনুষ্ঠানে নিজের আঁকা কয়েকটি ছবি নিয়ে অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন এক সময়ের পর্দা কাঁপানো এ তারকা অভিনেত্রী।

‘থটস’ শিরোনামের চিত্রকর্ম
সিঁড়ি ডেভির আঁকা ‘থটস’ শিরোনামের চিত্রকর্ম ; ছবি: asridevi

অভিনয়ে যাত্রা-

তামিল চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় : ১৯৬৭-১৯৭৫

শ্রীদেবী চার বছর বয়সে অভিনয় শুরু করেন। তামিল চলচ্চিত্রের নাম থুনাইভান। এই চলচ্চিত্রে তিনি মুরুগা চরিত্রে অভিনয় করেন। বেশ প্রশংসিত হন প্রথম অভিনয় দিয়ে। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি ডাক পান বেশ কয়েকটি তামিল ও তেলেগু চলচ্চিত্রে। শ্রীদেবী ছিলেন এমন একজন শিশুশিল্পী যে বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পারদর্শী ছিলেন।

তামিল চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়
তামিল চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে শ্রীদেবীর অভিনয় ;ছবি: businesshour24

পোমবাট্টা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি কেরালা স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড-এ সেরা শিশুশিল্পীর পুরস্কার পান। এরপর তিনি একের পর এক চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। কান্ডান কারুনাই (১৯৬৭), নাম নাড়– (১৯৬৯), প্রার্থানী (১৯৭০), বাবু (১৯৭১), ভাসান্থা মালিগাই (১৯৭২), মারাপুরানি মানিশি (১৯৭৩) ও জুলি (১৯৭৫) উল্লেখযোগ্য। জুলি সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয় : ১৯৭৬-১৯৮২

শ্রীদেবী দক্ষিণী সিনেমার যাত্রা শুরু তামিল মোনড্রু মুডিচু (১৯৭৬) সিনেমার মাধ্যমে। তখন তার বয়স ১৩! এই সিনেমায় তিনি তামিল দুই মহাতারকা কমল হাসান ও রজনীকান্তের বিপরীতে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন দক্ষিণের বিখ্যাত পরিচালক বালাচন্দর। চলচ্চিত্রটি বেশ আলোচিত হয়। তিনজনই এরপর বিভিন্ন সিনেমার প্রস্তাব পেতে শুরু করেন।

১৯৭৭ সালে শ্রীদেবী করেন গায়ত্রী (১৯৭৭) চলচ্চিত্রটি। এরপর করেন কাবিক্কুইল (১৯৭৭) কিন্তু একই বছর সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন ১৬ ভেইথিনাইল সিনেমা দিয়ে। এই সিনেমাটি তামিল চলচ্চিত্রের একটি মাইলফলক। কারণ এই সিনেমাটি স্টুডিও ছেড়ে আউটডোরে শুটিংয়ের রাস্তা খুলে দেয়। এরপর থেকে তামিল সিনেমাতে আউটডোরে শুটিং করা শুরু হয়। আর এর মাধ্যমে শ্রীদেবীও মহাতারকা বনে যান।

১৬ ভেইথিনাইল
১৬ ভেইথিনাইল দক্ষিণী সিনেমায় শ্রীদেবী ; ছবি: zerodollarmovies

এরপর ১৯৭৮ সালে তিনি নিয়ে আসেন আরেক ব্লকবাস্টার সিনেমা সিগাপ্পু রোজাক্কল। থ্রিলার ঘরানার সিনেমাটি ১৭৫ দিন প্রেক্ষাগৃহে চলে রেকর্ড সৃষ্টি করে। একই বছর আরেকটি জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন তিনি প্রিয়া নামে। এ বছরই দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন ভানাকাটুকুরিয়া কাথালিয়ে চলচ্চিত্রে এবং ১৬ ভেইথিনাইল এর তেলেগু সংস্করণ পাডাহারেল্লা ভায়াসু চলচ্চিত্রে।

১৯৭৯ সালে তিনি উপহার দেন জনপ্রিয় তেলুগু চলচ্চিত্র কার্তিকা দিপাম (১৯৭৯)। একই বছর তিনি এন টি রামা রাও এর সঙ্গে করেন ভেটেগাডু (১৯৭৯) সিনেমাটি। তেলুগু দর্শকের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয় এই জুটি। এরপর তাঁরা একসঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে করেন ১২টি চলচ্চিত্র। একই বছর তিনি করেন তামিল চলচ্চিত্র কল্যাণারাম (১৯৭৯), থাইল্যামাল নান ইল্লাই (১৯৭৯), ধর্মা যুদ্ধাম (১৯৭৯)।

এ বছরই শ্রীদেবীর বলিউডে নারী কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিষেক হয় সলভা সাওয়ান (১৯৭৯) সিনেমার মধ্য দিয়ে। হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রথম সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন অমল পালেকর। চলচ্চিত্রটি তামিল ১৬ ভেইথিনাইল (১৯৭৭) সিনেমাটির হিন্দি সংস্করণ। সিনেমাটি বলিউডে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।

১৯৮০ সালে শ্রীদেবী করেন তামিল জনি (১৯৮০) চলচ্চিত্রটি। প্রথম দিকে বক্স অফিসে খুব একটা সাড়া জাগাতে না পারলেও ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রটির গান ও অভিনয় দিয়ে সাড়া জাগিয়ে ফেলে। একই বছর তিনি করেন ভারুমাইয়িন নিরাম শিভাপ্পু (১৯৮০) চলচ্চিত্রটি। এটি ১৯৮১ সালে তেলেুগ সংস্করণে করা হয় আকালি রাজিয়াম (১৯৮১) নামে। একই বছর তিনি করেন তামিল সিনেমা গুরু (১৯৮০), তেলুগু সিনেমা ছুট্টালুন্নারু জাগার্থা (১৯৮০) সিনেমাটি পরে যেটি অন্য সংস্করণে (রিমেক) করা হয় মাওয়ালি (১৯৮৩) নামে।

শ্রীদেবী
শ্রীদেবী ; ছবি: somoynews

১৯৮১ সালে উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আছে তামিল মেন্ডাম কোকিলা (১৯৮১), তেলেগু কোন্ডাভেটি সিমহাম (১৯৮১), আগি রাভা (১৯৮১), পুলি বিদ্যা (১৯৮১), প্রেমাভিষেকাম (১৯৮১), আকালি রাজিয়াম (১৯৮১)। পরের বছর করেন ভাঝভি মায়াম (১৯৮২) ও পোক্কিরি রাজা (১৯৮২)। তেলেগু সিনেমাতেও ব্যাপক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দেন এই অভিনেত্রী যা পরবর্তীকালে হিন্দি সংস্করণ করা হয়। এর মধ্যে জাস্টিস চৌধুরী (১৯৮২) অন্যতম। যেটি ১৯৮৩ সালে একই নামে হিন্দি সংস্করণে বের হয় এবং পরের বছর তোহফা (১৯৮৪) নামেও করা হয়। তিনি ১৯৮২ সালে আরও কয়েকটি তেলেুগু সিনেমা উপহার দেন। বোবিলি পুলি (১৯৮২) ও অনুরাগা দেবাথা (১৯৮২) অন্যতম। তবে ১৯৮২ সালের তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় তামিল সিনেমা ছিল মোনদ্রাম পিরাই (১৯৮২)। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তামিলনাড়– স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পান সেরা অভিনেত্রী হিসেবে। একই চলচ্চিত্র পরের বছর হিন্দিতে সাদমা (১৯৮৩) নামে তৈরি করা হয়।

বলিউডে অভিষেক : ১৯৮৩-১৯৮৬

দক্ষিণে ইতিমধ্যে শ্রীদেবী মহাতারকা। এবার যাত্রা শুরু হলো বলিউডে। ১৯৮৩ সালে হিম্মতওয়ালা (১৯৮৩) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দেন। এটা ছিল তেলুগু চলচ্চিত্র ওরিকি মোনাগাদু (১৯৮১) চলচ্চিত্রের হিন্দি সংস্করণ। একই বছর আরও কয়েকটি দক্ষিণী ছবির হিন্দি সংস্করণ করে সাড়া ফেলে দেন শ্রীদেবী। এই বছরেই সাদমা (১৯৮৩) করে নিজেকে চেনান আরও একবার। এবং বলিউডের মহাতারকা রূপে দেখা দেন।

সাদমা
দক্ষিণী ছবির হিন্দি সংস্করণ সাদমা ; ছবি: amazon

বলিউড ছাড়াও শ্রীদেবী একই সময়ে দক্ষিণী বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র করেন। এর মধ্যে শ্রী রাঙ্গা নেথুলু (১৯৮৩), রামারাজিয়ামলো ভিমারাজু (১৯৮৩), অদুথা ভিরাসু (১৯৮৩), মুনডাদুগু (১৯৮৩) অন্যতম।

এরপর একের পর এক বলিউড জনপ্রিয় ছবি উপহার দিতে থাকেন শ্রীদেবী। তোহফা (১৯৮৪), মাকসাদ (১৯৮৪), আকালমান্দ (১৯৮৪), ইনকিলাব (১৯৮৪), জাগ উথা ইনসান (১৯৮৪) অন্যতম। ইনকিলাব চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও শ্রীদেবী। বলিউডের কাজের মাঝেও শ্রীদেবী দক্ষিণী চলচ্চিত্রে কাজ করেন। উল্লেখ করার মতো চলচ্চিত্র ছিল কোডে তেরাচু (১৯৮৪) ও কৃষ্ণ কাঞ্চু কাগড়া (১৯৮৪)।

শ্রীদেবী
তাঁর রূপ আর প্রতিভা দুটোই তখন জয় করছে বলিউড; ছবি : banglanews24.com

তবে বলিউডে একের পর এক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দিতে থাকেন তিনি। এর মধ্যে সারফারোশ (১৯৮৫) ও বলিদান (১৯৮৫) অন্যতম। চালিয়ে যান দক্ষিণী সিনেমাও। ওকা রাধা ইদারু কৃষ্ণুলু (১৯৮৫) ও কৃষ্ণা বিজরাযুদ্ধাম (১৯৮৫) উল্লেখযোগ্য।

পরের বছরও শ্রীদেবী জনপ্রিয়তার ধারা চলতে থাকে। ঘর সংসার (১৯৮৬), ধর্ম অধিকারী (১৯৮৬), সুগান (১৯৮৬), আখেরি রাস্তা (১৯৮৬), কর্ম (১৯৮৬), নাগিন (১৯৮৬) উল্লেখযোগ্য। এ বছরই শ্রীদেবীর জনপ্রিয়তার পারদ আকাশচুম্বী হয়ে যায়। পাঁচ বছর আগে তাঁকে বুকিং না দিলে সিনেমাতে তাঁকে পাওয়া কঠিন হয়ে যায় পরিচালকদের জন্য। বলিউডে অমিতাভ বচ্চনের পরেই শ্রীদেবী সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেওয়া শুরু করেন।

ভারতের অভিনয় জগতে প্রথম নারী মহাতারকা : ১৯৮৭-১৯৯০

নাগিন (১৯৮৬) এর সাফল্যের পর মি. ইন্ডিয়া (১৯৮৭) তে অভিনয় করেন। একে একে করেন আওলাদ (১৯৮৭), মায়াজাল (১৯৮৭), ওয়াতান কি রাখওয়ালে (১৯৮৭), জওয়াব হাম দেঙ্গে (১৯৮৭)। এই সময়ে শ্রীদেবী অনেক সিনেমা বাদ দেন ছোট চরিত্রের জন্য। তাকে তুলনা করা শুরু হয় অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে।

ভারতের অভিনয় জগতে প্রথম নারী মহাতারকা
ভারতের অভিনয় জগতে প্রথম নারী মহাতারকা ; ছবি : jagonews24

সিনেমা ম্যাগাজিন ও খবরের কাগজগুলো প্রথমবারের মতো পুরুষ তারকাদের সঙ্গে নারী তারকাদের তুলনা করা শুরু হয় তাঁর মাধ্যমে। অমিতাভ বচ্চন ও শ্রীদেবীকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয় বলিউডে। তিনি ঘোষণা ছাড়াই হয়ে ওঠেন নারী মহাতারকা। এই সময়ে আরও বেশ কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দেন এই অভিনেত্রী।

শেষ সময় : ১৯৯১-১৯৯৭

এই সময়কে বলা হয় শ্রীদেবীর রাজত্বের শেষ সময়। ১৯৯১ সালে শ্রীদেবী তিনটি সিনেমায় অভিনয় করেন। এর মধ্যে ফারিশতে (১৯৯১) ও লামহে (১৯৯১) উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণের সিনেমা কাষাণা কিষাণাম (১৯৯১) বেশ জনপ্রিয় হয়। ১৯৯২ সালে তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমা ছিল খুদা গাওয়া (১৯৯২)। ১৯৯৩ সালে করেন তার বহুল প্রতিক্ষিত সিনেমা গুরুদেব (১৯৯৩)। এই বছরই তাঁর ছেয়ে ছোট তারকাদের সিনেমাতে অভিনয় শুরু করেন শ্রীদেবী। সালমান খানের সঙ্গে করেন চন্দ্রমুখী (১৯৯৩)। এ ছাড়া সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে করেন গুমরাহ (১৯৯৩)। এই সময়ে হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মালয়ালাম ও কন্নড় ভাষায় বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন। ১৯৯৭ সালে জুড়ি সিনেমা শ্রীদেবীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সিনেমার শুটিং চলাকালীন তাঁর মা মারা যান এবং বণি কাপুরকে বিয়ে করেন।

বিরতি ও মহাতারকার ফিরে আসা : ১৯৯৮-২০১২

বিয়ের পরপরই বলিউডের এই রানী প্রায় ১৫ বছর অভিনয় জগত থেকে বিরতি নেন। শ্রীদেবী সংসারে মনযোগী হন। তেমন একটি সিনেমাতে অভিনয় করেননি। উল্লেখযোগ্য সিনেমা বলা যায়, শক্তি দ্য পাওয়ার (২০০২) ও মেরি বিবি কা জওয়াব নেহি (২০০৪)। এ ছাড়া ২০০৯ সালে টিভি অনুষ্ঠান ১০ কা দম এ অংশগ্রহণ করেন।

ইংলিশ ভিংলিশ
ইংলিশ ভিংলিশ সিনেমায় শ্রীদেবী ; ছবি : zee5

২০১২ শ্রীদেবী আবার সিনেমাতে ফিরে আসেন। ইংলিশ ভিংলিশ (২০১২) সিনেমার মাধ্যমে ফের প্রশংসা কুড়ান। এটা ছিল শ্রীদেবীর ৩০০তম সিনেমা। ২০১৫ সালে করেন তামিল সিনেমা পুলি (২০১৫)। ২০১৮ সালে করেন মম। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

শ্রীদেবী -মিঠুন – বনির ত্রিমুখী প্রেম কাহিনী

প্রেম মানে না কোনো বাধা—এ কথা বলিউড অভিনেত্রী শ্রীদেবী ও প্রযোজক বনি কাপুরের ক্ষেত্রে ষোল আনা প্রযোজ্য। পারিবারিক ও সামাজিক নানা বাধাবিপত্তির পরও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তারা। ২০১৮ সালে শ্রীদেবীর আকস্মিক মৃত্যু এই বন্ধনে ছেদ পড়ে।

শ্রীদেবী -মিঠুন - বনির ত্রিমুখী প্রেম কাহিনী
শ্রীদেবী -মিঠুন – বনির ত্রিমুখী প্রেম ; ছবি : westbengalnews24

বনি কাপুরের সঙ্গে বিয়ের আগে বলিউড অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শ্রীদেবী। তা নিয়ে বলিপাড়ায় বহু চর্চা হয়েছে। মিঠুন-শ্রীদেবী-বনির ত্রিভুজ প্রেম ও শ্রীদেবী-বনির বিয়ের গোপন কিছু তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।

শ্রীদেবীর প্রতি বনি কাপুরের প্রেম-অনুরাগ

তামিল সিনেমায় শ্রীদেবীর তখন একছত্র অভিনয়ের দাপট। এরই মধ্যে সুযোগ মেলে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ সিনেমায় অভিনয়ের। এর প্রযোজক ছিলেন বনি কাপুর। এই সিনেমার সুবাদে প্রথমবার সাক্ষাৎ করেন বনি কাপুর ও শ্রীদেবী। তবে তার বহুদিন আগে তামিল সিনেমায় শ্রীদেবীকে দেখেন বনি কাপুর। রুপালি পর্দায় দেখেই শ্রীদেবীর প্রেমে পড়েন বনি। তখন বনি কাপুর অবিবাহিত ছিলেন। শ্রীদেবীর সঙ্গে তার যখন বন্ধুত্ব হয়, ততদিনে বিয়ে করে ফেলেন বনি কাপুর।

শ্রীদেবীর হৃদয়ে মিঠুন

শোনা যায়, বলিউডে শ্রীদেবীর প্রথম প্রেম ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। মিঠুনের সঙ্গে যখন শ্রীদেবীর প্রেম হয়, তখন আর কোনো দিকে তাকাননি ‘রূপ কি রানি’ শ্রীদেবী। গুঞ্জন উঠেছিল, মিঠুনের সঙ্গে গোপনে বিয়েও সেরেছেন শ্রীদেবী।

শ্রীদেবীর হৃদয়ে মিঠুন
শ্রীদেবীর হৃদয়ে মিঠুন ; ছবি : jagonews24

যদিও মিঠুন এই দাবি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। পরে জানা যায়, বিভিন্ন কারণে মিঠুন তাদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনতে দেননি। আর সেজন্যই শ্রীদেবীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় মিঠুনের।

বনির সঙ্গে শ্রীদেবীর ঘনিষ্ঠতা

মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর প্রযোজক বনি কাপুরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গভীর হয় শ্রীদেবীর। ততদিনে বনি কাপুর ও মোনা শৌরি বিয়ে করে সংসার করছেন। শুধু তাই নয়, তাদের সংসার আলো করে এসেছে দুই সন্তান। ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবন ততদিনে কাটিয়ে ফেলেছেন এই দম্পতি।

শ্রীদেবীর মায়ের ঋণ শোধ করেন বনি

একদিকে মিঠুনের থেকে দূরত্ব অন্যদিকে বনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। এসময় শ্রীদেবীর মায়ের বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করে দেন বনি কাপুর। যে ঘটনার পর বিঘলিত হয়ে পড়েন শ্রীদেবী। এরপর তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়।

শ্রীদেবী-বনির পরিণয়

১৯৯৬ সালে শ্রীদেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বনি কাপুর। ততদিনে শ্রীদেবী দারুণ জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। অন্যদিকে বনি কাপুরের প্রথম পক্ষের সন্তান অর্জুন ও অনশুলাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান মোনা। এরপর আলাদাভাবে মানুষ হতে থাকেন অর্জুন ও অনশুলা।

শ্রীদেবী-বনির পরিণয়
বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তার জন্য মোটেও সহজ ছিলো না ; ছবি : bollywoodshaadies

শ্রীদেবীর সঙ্গে বিয়ের পর বনির প্রথম স্ত্রীর বক্তব্য

শ্রীদেবী-বনি কাপুর বিয়ে করার পর নানা বিষয় সামনে আনেন বনি কাপুরের প্রথম স্ত্রী মোনা। এক সাক্ষাৎকারে মোনা কাপুর জানান, বিয়ের সময়ে শ্রীদেবী গর্ভবতী ছিলেন। আর ততদিনে শ্রীদেবীর প্রতি বনি প্রেমে মশগুল হয় পড়েন। তাই নিয়তির নিয়মে প্রথম স্ত্রী মোনাকে ও তার দুই সন্তানকে ছেড়ে শ্রীদেবীকে বিয়ে করেন বনি কাপুর।

শ্রীদেবী-বনির সন্তান

একদিনে মোনা শুরু করেন টিভি সিরিয়াল প্রযোজনার কাজ। অন্যদিকে ক্যারিয়ারের পাশাপাশি কন্যা জানভি ও খুশিকে নিয়ে সংসার শুরু করেন শ্রীদেবী ও বনি কাপুর।

শ্রীদেবী-বনির সন্তান
শ্রীদেবী-বনির দুই মেয়ে ;ছবি : prothomalo

শ্রীদেবীকে মারধরের গুঞ্জন

ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম জানায়, শ্রীদেবীর সঙ্গে বনি কাপুরের বিয়ের পর, এক অনুষ্ঠানে মোনার মায়ের সঙ্গে দেখা হয় শ্রীদেবীর। তখন শ্রীদেবীকে বনি কাপুরের প্রথম স্ত্রী মোনার মা সতী শৌরি মারতে উদ্যত হন বলে শোনা যায়। দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল।

পুরস্কার ও সম্মাননা

অভিনয় জগতে তার এই দৃঢ় পদচারণা তাকে এনে দিয়েছে আটটি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার সহ অসংখ্য পুরষ্কার। ২০১৩ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে পান দেশটির চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক পুরষ্কার ‘পদ্মশ্রী’।

সর্বোচ্চ নাগরিক পুরষ্কার ‘পদ্মশ্রী’
‘পদ্মশ্রী’ পুরষ্কার সহ অসংখ্য পুরষ্কার লাভ করেন শ্রীদেবী; ছবি : hindustantimes

আরো আটবার ফিল্মফেয়ার পুরষ্কারের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তামিলনাড়ু রাজ্যের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরষ্কারসহ তিনি ভূষিত হয়েছেন আরো প্রায় একুশটি পুরষ্কার ও সম্মাননাতে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ২০১৩ সালে কেরালা সরকার ও ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে থেকে পাওয়া পৃথক দুটি সম্মাননা।

মহাতারকার মৃত্যু

তিনি ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের জুমেইরাহ এমিরেটস টাওয়ারের বাথরুমের বাথটাবের পানিতে দম আটকে মৃত্যু বরণ করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ছিল শুধুই একটি দুর্ঘটনা। রূপালি পর্দার এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী মাত্র ৫৪ বয়সে ছেড়ে যান এই নশ্বর পৃথিবী।

সূত্র : রোয়ার মিডিয়া , দ্যা ডেইলি স্টার, সিনেঘর

Related posts

ভিকি কৌশল উচ্চতা, বয়স, গার্লফ্রেন্ড, পরিবার, জাত, জীবনী ও সম্পূর্ণ প্রোফাইল

News Desk

মৌসুমী হামিদ জন্ম,পেশা,কর্মজীবন,অ্যাফেয়ার্স,ফেইসবুক,ফ্যামিলি

News Desk

আফজাল হোসেন জীবনী, শিক্ষা ,ফ্যামিলি,চলচ্চিত্র,নাটক, এবং প্রকাশিত বই

News Desk

Leave a Comment