Image default
বাংলাদেশ

৬ কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদযাত্রা হবে ভোগান্তির

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন উত্তরবঙ্গসহ ২৬ জেলার হাজারও যানবাহন চলাচল করে। প্রতিবছর ঈদের সময় যানবাহনের চাপে এই মহাসড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। এ মহাসড়কে চলমান উন্নয়ন কাজের জন্য ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে চার লেন, ফ্লাইওভার ও নলকা সেতুর কাজ চলমান থাকায় সড়কে যান চলাচলে ধীরগতি রয়েছে। ঈদে এ সমস্যা প্রকট হতে পারে। এছাড়া সড়কের খানাখন্দ এবং বিভিন্ন স্থানে চার লেনের সড়ক দুই লেনের সড়কে মিলিত হওয়ায় যানজট চরম আকার ধারণ করে। বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায় কেন্দ্রের ধীরগতিও উত্তরের মহাসড়কে যানজটের অন্যতম একটি কারণ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতির এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় এবারও ঈদযাত্রায় যানজটের শঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে সড়ক প্রশস্তের কাজ। সিরাজগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুর পাশে নতুন করে আরেকটি সেতু তৈরির কাজও চলমান রয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে এখনও যানবাহন চলাচল করছে, খুব ধীরগতিতে। এজন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ নলকা সেতু। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ ছাড়াও ঝিনাইগাতি লিংকরোড, সয়েদাবাদ, মুলিবাড়ী, কড্ডা, ভূইয়াগাতি ও চান্দাইকোনা লিংকরোডসহ কয়েকটি এলাকার লিংক রোডের কারণেও ঈদযাত্রায় যানজটের সৃষ্টি হয়।


এদিকে, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে মির্জাপুরের গোড়াই ফ্লাইওভারের কাজ এখনও চলমান। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত খুব সহজেই যানবাহন যাতায়াত করতে পারছে। তবে ফ্লাইওভারের কাজ চলমান থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। কাজ চলমান থাকায় ফ্লাইওভারটির দুইপাশ দিয়ে যানবাহন ধীরগতিতে যাতায়াত করছে।

এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক এখনও দুই লেনে রয়েছে। আর এই দুই লেন সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ ও কয়েকটি জায়গায় লিংক রোডের কারণে সেতুর পূর্বপাড়েও যানজটের সৃৃষ্টি হয়। 

এছাড়া ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার কারণেও কিছুটা জটের সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে সিরাজগঞ্জের কারণেই মূলত টাঙ্গাইল অংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ করেছেন যানবাহন চালক ও সাধারণ যাত্রীরা।

ট্রাফিক পুলিশ এবং পরিবহনের শ্রমিকরা বলেন, প্রতিদিন এই মহাসড়কে গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার যানবাহন চলাচল করে। আর ঈদের সময় ঘরমুখো যাত্রীদের চাপে যানবাহনের সেই সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয়গুণ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ের ধীরগতির কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।

 চালক ও ভুক্তভোগীরা বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো চার লেন সুবিধা নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে এলেঙ্গা পর্যন্ত চলে আসে। তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কটি দুই লেনের। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুও দুই লেনের। এতে চার লেনের সুবিধায় এলেঙ্গা পর্যন্ত আসা যানবাহনগুলো দুই লেনের মুখে আটকে যায়। সেখান থেকেই যানজটের শুরু। 

এছাড়া সিরাজগঞ্জ অংশে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় সড়কে চাপ বাড়লেই যানজটের সৃষ্টি হয়। সেই জট টাঙ্গাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আবার সেতুতে টোল দিতে গিয়েও যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈদযাত্রায় নলকার নতুন সেতু খুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা। সেই সঙ্গে সড়ক প্রশস্তকরণকাজ বন্ধ রাখারও দাবি জানান তারা। 

তবে মহাসড়কে এবার গতি আসবে বলে আশ্বস্ত করেছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও দেখভালকারী প্রকৌশলীরা।   

মহাসড়ক উন্নীতকরণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মীর আখতার জয়েন্ট ভেঞ্চারের ব্যবস্থাপক এখলাছ উদ্দিন বলেন, ‘আগামী ২৫ এপ্রিল নলকার নতুন সেতুর এক লেন খুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের খানাখন্দগুলো সংস্কারের কাজ শেষ করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ বন্ধ রাখা হবে।’

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জয়দেবপুর-এলেঙ্গা চার লেন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার অমিত কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘এ সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। মির্জাপুরের ফ্লাইওভারটি খুলে দেওয়া হবে। ঈদযাত্রায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কম সময়ে সাধারণ যাাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।’

বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদযাত্রায় যানবাহন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ছয় থেকে সাতটি লেনে টোল আদায় করা হয়। ঈদের আগে যানজট কমাতে সেতুর উভয়পাশে ১৮টি লেনে টোল আদায় করা হবে।’

 যানজট ও সড়ক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘যানজটের বিষয়টি নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। যানজট হলে আমরা ব্যবসায়িকভাবে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমরাও তো সবার মতো অপেক্ষায় থাকি ঈদে বাসের মালিক ও শ্রমিকরা একটু বেশি টাকা আয় করবে। তবে দেখা যায় যানজটের কারণে একদিন গাড়ি ঢাকা যায়, আর তিন দিন পর ফিরে আসে। এ অবস্থায় আমাদের লাভের লাভ তেমন হয় না।’
 
ঈদে মহাসড়ক গতিশীল রাখতে গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, ‘যানজট নিরসনে সড়কে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। আমরা হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছি।’

যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, যানজট এড়াতে এবার আমরা ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছি। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়ককে আমরা অধিক বিবেচনায় রেখে সেখানে অস্থায়ী রোড ডিভাইডার স্থাপন করছি। এবার সড়কে ৭১০ জন পুলিশ সদস্য সব সময় কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

 

Source link

Related posts

মহাসড়কে বাস সংকটে ভোগান্তি, বাড়তি ভাড়া আদায়

News Desk

ঢাবি শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোন কিনতে ঋণ পাচ্ছেন আট হাজার

News Desk

নয়া দামানের পর এবার সিলেটের আরেকটি গান ভাইরাল

News Desk

Leave a Comment