Image default
বাংলাদেশ

৩ দিন ধরে ভাত খাইনি, ধানের গোলায় পানি

‘খাটের ওপর পানি উঠে গেছে। রান্নাঘর-চুলা সবই পানির নিচে। তিন দিন ধরে ভাত খাইনি। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। কয়েক রাত ধরে ঘুমাতেও পারছি না। শিশু সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। কিছু হাঁস-মুরগি পালতাম, তাও বানের জলে ভেসে গেছে। এখন আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ দেখার নেই।’ 

ঘরের দরজায় কোমর সমান পানিতে দুই বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে এভাবেই নিজের দুর্দশার কথা বলছিলেন করিমগঞ্জ উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের দড়িগাংটিয়া গ্রামের মনোয়ারা বেগম।  

একই অবস্থা জেলার হাওর এলাকা বলে পরিচিতি ছয় উপজেলার শতাধিক গ্রামের। স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে কিশোরগঞ্জের ছয়টি উপজেলার শতাধিক গ্রাম। স্মরণকালের মধ্যে এত দ্রুত পানি বাড়তে দেখেননি হাওরবাসী। চরম দুর্দশা আর অনিশ্চয়তায় দিন-রাত আতঙ্কে কাটাচ্ছেন তারা। বন্যার পানিতে ডুবেছে সুপেয় পানির টিউবওয়েল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে তাও অপ্রতুল। তবে বন্যার্ত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। 

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। তবে অনেক মানুষ এখনও সহায়-সম্বল বাঁচাতে দুর্যোগের মধ্যে বাড়িতে রয়ে গেছে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি বা ঘরের আসবাব রেখে যেতে চাইছেন না তারা।

বোরো ধানের ওপরই নির্ভর করে হাওরের অর্থনৈতিক অবস্থা। আগাম বন্যায় দেশের বিভিন্ন হাওরে ব্যাপক ফসলহানি হয়। তবে কিশোরগঞ্জের হাওরে শেষ পর্যন্ত ক্ষতি কমই হয়েছিল। এক লাখ চার হাজার হেক্টর জমিতে এবার আবাদ হয় বোরো ধানের। আগাম বন্যায় কয়েকশ’ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হলেও বাকি ধান তুলতে পেরেছিলেন কৃষকরা। 

ধান বিক্রির টাকায় বছরের খরচ চালানোর চেষ্টা ছিল তাদের। তবে কৃষকদের সংরক্ষণ করা ধানের গোলাও এখন পানির নিচে। আবার অনেক স্থানে গোলা ছুঁই ছুঁই করছে পানি। এ অবস্থায় কৃষকের মাথায় হাত। অনেকে নৌকায় করে ধান নিয়ে নামমাত্র দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার অনেকে ধান হারিয়ে এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। 

ইটনা উপজেলার পশ্চিম গ্রামের নন্দীহাটির কৃষক কুদরত মিয়া বলেন, ‘এমনিতেই এবারের বৈশাখে আগাম বন্যার ভয়ে কাঁচা-পাকা ধান কেটে ফেলছিলাম। তারপরও যতটুকু ভালো ধান ঘরে তুলেছিলাম, সেগুলো নিয়াও আছি বিপদে। নিজে পরিবার নিয়া বাঁচবো, না ধান ও গরু-বাছুর বাঁচাবো। যেই ধান গোলায় আছে এখন দেখছি সেগুলোও ভাসবো।’

 কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইটনা সড়কহাটির গরু ও হাঁসের খামারি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বেশ কিছু হাঁসের বাচ্চা গত দুদিনে মারা গেছে। অনেক হাঁস বানের পানিতে ভাইসা গেছে। গরুগুলোও আছে পানির মধ্যে। সব মিলে মহাবিপদে আছি।’

গোলার ধান নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করেছেন মৃগা ইউনিয়নের লাইমপাশা গ্রামের কামাল মিয়া। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমার সব শেষ। আমার শেষ সম্বল যেটুকু শুকনো ধান ছিল, তাও পচনের হাত থেকে বাচাঁতে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করে দিয়েছি। এখন সারা বছর কেমনে চলমু, সেটাই ভাবতাছি।’ 

তবে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার এসব মানুষের জন্য আপাতত কোনও সুখবর নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, হাওরের ওপর দিয়ে বিভিন্ন নদনদীর পানি বেরিয়ে যাচ্ছে। এতে হাওরে পানি বাড়ছে। এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অবস্থার আরও অবনতি হবে।  

Source link

Related posts

বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে ৩০ কিলোমিটার যানজট

News Desk

বকেয়া টাকা চাওয়ায় মুদি দোকানিকে পিটিয়ে হত্যা 

News Desk

রাজশাহী ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২২ জনের মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment