Image default
বাংলাদেশ

সাড়ে ৩ মাসেও বাড়ি ফেরেননি চট্টগ্রামের ৩২ জেলে

সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে সাড়ে তিন মাসেও বাড়ি ফেরেননি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শিলকূপ ইউনিয়নের ৩২ জেলে। ফেরার অপেক্ষায় প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিন মাসেও না ফেরায় চরম অর্থাভাবে কষ্টে দিন কাটছে স্বজনদের। তবে নিখোঁজ জেলেরা সাগরে ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়ে দেশটির কারাগারে বন্দি আছেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন ট্রলার মালিক নুরুল আবছার।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি মাছ ধরার ট্রলার ‘এফবি সোনার মদিনা-২’ নিয়ে বাঁশখালী থানাধীন বাংলাবাজার ঘাট থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান ৩২ জেলে। এরপর আর ফেরেননি।

তারা হলেন- শিলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর গ্রামের ওমর মিয়ার ছেলে শাহ আলম, ওমর কাজীর ছেলে ছাবের, আলী আকবরের ছেলে সৈয়দুল আলম, ওমর কাজীর ছেলে হাবিবুর রহমান, মোস্তফা আলীর ছেলে কামাল হোসেন, হাবিব উল্লাহর ছেলে জিয়াউর রহমান, কামাল উদ্দীনের ছেলে দিদারুল আলম ও জয়নাল আবেদিন, মুহাম্মদ আলীর ছেলে নুর হোসেন ও আজগর হোসেন, সিকান্দার আলীর ছেলে আলী আহমদ, মোস্তফা আলীর ছেলে জাফর আহমদ, মো. ইউসুফের ছেলে আকতার হোসেন, হানিফের ছেলে কবির হোসেন, হাসান আলীর ছেলে আবুল হোসেন, আহছান আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম, ওমর কাজীর ছেলে জয়নাল উদ্দীন, আবুল কাশেমের ছেলে মাহমুদুল ইসলাম, আবুল কাশেমের ছেলে ওবাইদুল হক, আলী আহমদের ছেলে মো. আবদুল্লাহ, হারুনুর রশিদের ছেলে শামসুল আলম, নবী হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, শাহ আলমের ছেলে মো. ফারুক, আবদুল আজিজের ছেলে মো. জোনাইদ, লাল মিয়ার ছেলে আবদুল আজিজ, নুরুচ্ছফার ছেলে আহমদ নুর, সৈয়দ নুরের ছেলে আরিফ উল্লাহ, আবদুস সালামের ছেলে হোসেন আহমদ, মোস্তফা আলীর ছেলে নুরুল আলম, নজির আহমদের ছেলে জসীম উদ্দীন এবং আমির আমজার ছেলে মো. ইয়াছিন।

ভারতের কারাগারে থাকা জেলে আবুল হোসেনের ছেলে হাসান আলী বলেন, ‘আমরা খুব আর্থিক কষ্টের মধ্যে আছি। বাবার উপার্জনে আমাদের পুরো পরিবার চলতো। উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা কিছু খাদ্যসামগ্রী পেয়েছিলাম। এগুলো দিয়ে কয়েকদিন চলেছিল। এখন আর্থিক সংকটের মধ্যে আছি। শুনেছি, তারা এখন ভারতের কারাগারে আটক আছেন। ট্রলারের মালিক নুরুল আবছার তাদের তাদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করছেন।’

নুরুল আবছার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ৮ ফেব্রুয়ারি তারা সাগরে যায়। এর মধ্যে ১৩ ফেব্রুয়ারি সাগরে ঘন কুয়াশায় পথ হারিয়ে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ে। তখন ট্রলারসহ তাদের আটক করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হই। এ বিষয়ে বাঁশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ৩২ জেলে বর্তমানে ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ নামখানা কারাগারে বন্দি আছেন বলে শুনেছি।’

শিলকূপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘বাঁশখালীর ৩২ জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে তিন মাস ধরে ভারতের কারাগারে বন্দি আছেন। তাদের একমাত্র পেশা মাছ ধরা। তাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। যারা আটক হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের ওপর ভর করে চলে পুরো পরিবার। এখন তাদের খুব কষ্টে দিন কাটছে। এদের অনেকেই সরকারের বিভিন্ন ভাতা পান। তবে আমি যতটুকু জেনেছি, তাদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চলছে।’

শিলকূপ ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ভারতে আটক জেলেদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ভারতের আদালতে মামলা চলছে। মামলা পরিচালনার সব অর্থ ট্রলার মালিক বহন করছে। ভারতীয় দূতাবাসেও জেলেদের মুক্তির বিষয়ে সহায়তা চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করছি, আটক জেলেরা শিগগিরই জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরতে পারবেন।’

বাঁশখালী থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘৩২ জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ভুলবশত ভারতে জলসীমায় ঢুকে যায়। এরপর তাদেরকে সে দেশের কোস্টগার্ড আটক করে নিয়ে যায়। এমন তথ্য দিয়ে ট্রলার মালিক নুরুল আবছার থানায় একটি জিডি করেছিলেন। এ জিডি মূলে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেছিল বলে শুনেছি। তবে বর্তমান কী অবস্থা তা আমার জানা নেই।’

ইউএনও সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনার পর পরই স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় ভারতে আটক ৩২ জেলেদের তালিকা করা হয়েছিল। তালিকাটি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আটক জেলেদের পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।’

Source link

Related posts

এক জেলায় দুই হাজার কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন

News Desk

দেশে করোনা শনাক্তের হার আরও কমল

News Desk

অমির বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা

News Desk

Leave a Comment