Image default
বাংলাদেশ

শেখ সুহানা – অক্সিজেনের ফেরিওয়ালা

করোনা আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগেন। তাদের অক্সিজেন প্রয়োজন পড়ে। তবে সংকটের সময় তা হয়ে ওঠে দুর্লভ। অক্সিজেন না পেয়ে রোগী নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটির খবর গণমাধ্যমে আসছে। এমন রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শেখ সুহানা। মোবাইল ফোনে কল বা মেসেঞ্জারে বার্তা পেলেই স্কুটিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার তুলে ছুটে যান তিনি। রোগীর মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে নানা পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে সিলিন্ডার রিফিল করার ব্যবস্থা করেন। এভাবে গত তিন সপ্তাহে ৫৬ জনকে অক্সিজেন সরবরাহ করেছেন তিনি। করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য সহায়তাও দিচ্ছেন।

পেশায় ইয়োগা প্রশিক্ষক শেখ সুহানা এর আগে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেছেন পাঁচ বছর। তিনি সমকালকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই মানুষের কল্যাণে কিছু করার ইচ্ছা তার। এ জন্য প্রবাসী বান্ধবী ফারহানা তাসনিম সোনিয়ার সহায়তায় যৌথভাবে গড়ে তোলেন সুকর্মা ফাউন্ডেশন। তিন বছর আগে তারা কিশোরীদের পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি ও ফ্রি স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেন। এর মধ্যে গত বছর করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউন চলাকালে অসহায় মানুষের জন্য কিছু একটা করার কথা ভাবনায় আসে তাদের। সেই থেকে শুরু। গত বছর তারা যৌনকর্মীসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্যপণ্য দিয়েছেন। কর্মহীন এক হাজার রিকশাচালক পেয়েছেন আর্থিক সহায়তা।

সুহানা জানান, এবার তিনি অক্সিজেন সংকটের বিষয়টি চিন্তায় রেখে কাজ শুরু করেন। এখন পর্যন্ত ১২টি সিলিন্ডার সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই বিভিন্নজনের অর্থায়নে কেনা হয়েছে। ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে তার নম্বর ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখে লোকজন কল করেন বা মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠান। এরপর তিনি ছুটে যান রোগীর বাড়ি। ভারি সিলিন্ডারটি প্রায়ই সিঁড়ি বেয়ে পাঁচ-ছয়তলায় তুলতে বেগ পেতে হয়। করোনা রোগীর বাসায় যান বলে ভয়ে কেউ সহায়তাও করতে চান না। এমনকি ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেও সিলিন্ডার দেখে অনেকে বলেন, অক্সিজেন কেন? তার মানে ওই বাসায় করোনা রোগী আছে! তাহলে ওই বাসার লোকজনের সঙ্গে কথা বলা যাবে না।

শেখ সুহানা - অক্সিজেনের ফেরিওয়ালা

প্রথম দফায় বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করেন তিনি। রিফিল করতে হলে ১৪০ টাকা নেন। অবশ্য রোগীর সামর্থ্য না থাকলে সেটাও নেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাসায় থাকা রোগীদের আর্থিক সমস্যা তেমন নেই। তবে কোথা থেকে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করবেন সেটা জানা নেই। আবার সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে স্বজনরাও রোগীর কাছে যান না। ফলে রোগী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অক্সিজেন সরবরাহের পাশাপাশি তাই রোগীর মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেন সুহানা। অনেক সময় শরীর-মনে প্রশান্তি আনার কিছু কৌশল শিখিয়ে দেন।

সুহানা ও সুকর্মা ফাউন্ডেশনকে নানাভাবে সহায়তা করেন চিকিৎসক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার অন্তত ২৫ জন। তাদের সমন্বিত তৎপরতায় ঢাকার মিরপুরের কালশী, আদাবর, ঢাকা উদ্যান ও সাভারের ছয়টি এতিমখানার দুই হাজার শিশুকে প্রতিদিন খাবার দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের জন্যও কাজ করছেন সুহানা। তিনি প্রতিদিনই বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। নিয়মিতভাবে কিছু রোগীকে খাবার সরবরাহ তো চলছেই।

সুহানা বলেন, তিনি খাবার ও অক্সিজেন দিয়ে যতদিন সম্ভব মানুষের সহায়তা করে যেতে চান। এটাই তার আনন্দ। তবে যখন কেউ কল করে অক্সিজেন চান; কিন্তু সিলিন্ডার ফাঁকা না থাকায় দিতে পারেন না, তখন খুব খারাপ লাগে। শুভাকাঙ্ক্ষীরা এগিয়ে এলে সিলিন্ডারের সংখ্যা আরও বাড়ানো যেত বলে তিনি বলেছেন। তিনি অক্সিজেনের প্রয়োজনে তাকে ০১৬২৪৭৭৭৯৯৮ ফোন নম্বরে কল করার অনুরোধ করেছেন।

Related posts

সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছেন ৩ হাজার পর্যটক

News Desk

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৫০ শিক্ষার্থীর মেডিকেলে বাজিমাত

News Desk

হিলিতে আবারও কমেছে তাপমাত্রা, বেড়েছে শীত

News Desk

Leave a Comment