Image default
বাংলাদেশ

লকডাউনেও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। সরকারি নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ রয়েছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের লঞ্চ সার্ভিস। বন্ধ রয়েছে যাত্রী পারাপার। কিন্তু লকডাউনে ফেরিতে এ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি এবং প্রশাসনের অনুমতিতে বিশেষ জরুরিভাবে কোনো যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ও যাত্রী পারাপার বন্ধের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও দৌলতদিয়া দিয়ে পারাপার হচ্ছে ব্যক্তিগত অসংখ্য ছোট গাড়িও। সেইসাথে এ সুযোগে পারাপার হচ্ছে অসংখ্য যাত্রীও।

আগামীকাল রোববার থেকে সরকার দিনে ছয় ঘণ্টা দোকানপাট ও শপিংমল এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ঘোষণা দেয়াতে দক্ষিণাঞ্চল থেকে হাজার হাজার যাত্রী শনিবার সকাল থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ভিড় করছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাটে যাত্রী সাধারণের ঢল নেমেছে। আর লঞ্চ বন্ধ থাকার কারণে ছোট ছোট ট্রলার ও স্পিডবোট অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা-যমুনা পাড়ি দিচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগার সামনে দিয়েই। যাত্রী ও ছোট গাড়ির চাপে এ সময় ফেরিতে সিরিয়াল না মেনে পুলিশের সামনেই গাদাগাদি করে উঠতে ও নামতে দেখা গেছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও যাত্রীদের। নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই।

ফেরিতে মোটরসাইকেলের বেশি ভাড়া নেয়ার কারণে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে পার করা হচ্ছে যাত্রী ও মোটরসাইকেল।

শনিবার সরেজমিন দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহনে করে মানুষ ঘাটে আসছে। ভেঙে ভেঙে ঘাটে পৌঁছতে তাদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো ফেরিঘাট ছেড়ে যাচ্ছে না। অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্স পেতে ফেরিগুলোকে অপেক্ষায় করতে হয় দুই-তিন ঘণ্টা পর্যন্ত। এসময় ঘাটে আসা যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকেও অপেক্ষায় থাকতে হয় কখন অ্যাম্বুলেন্স ও পাস নিয়ে কোনো জরুরি গাড়ি ঘাটে আসবে। একটি ফেরি ছাড়ার প্রস্তুতি নিতেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন যাত্রীরা।

অভিযোগ রয়েছে, ট্রলার মালিকদের কাছ থেকে উৎকোচ নিচ্ছে ফেরিতে যাত্রী পারাপার টিকিটের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের লোকজন। প্রতি ট্রিপে ১০০ টাকা করে আদায় করেছেন তারা।

যশোর থেকে মোটরসাইকেল করে দৌলতদিয়া ঘাটে আসা এনজিওকর্মী তৈফিকুল আলম জানান, আমার মা অসুস্থ। তাই গাজীপুরে যাবো। অনেক কষ্ট করে ঘাটে এসেছি। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ঘাটে বসে আছি। কিন্তু নদী পার হতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে ট্রলারে যাচ্ছি।

দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ট্রলারে করে পাটুরিয়া ঘাটে যাচ্ছেন অসুস্থ শহীদুল আলম। তিনি জানান, সকালে নড়াইল থেকে আসছি ঘাটে ট্রলারে যাত্রী ভাড়া ৫০ এবং মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়েছে ৩০০ টাকা। এটি এক ধরনের জুলুম। মানুষের বিপদকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছে ট্রলারগুলো।

ট্রলারচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘লঞ্চ, ফেরি বন্ধ। যাত্রীরা পারাপার করতে পারছে না। তারা বাধ্য হয়ে ট্রলারে পার হচ্ছে। সবারই বিপদ। তারা যাচ্ছে দেখেই আমরা তাদের নিচ্ছি। প্রশাসনের লোকজন মাঝে মাঝে বাধা দেয়। এরপরও কী করার আছে? পেটের দায়ে নৌকা চালাই।’

বিআইডব্লিউটিসির টার্মিনাল সুপারিনটেন্ডেন্ড খুরশিদ হাসান বলেন, ফেরির পন্টুনে না ভিড়তে ট্রলারগুলোকে বলা হয়েছে। এরপরও সুযোগ পেলেই তারা যাত্রী তোলে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

গোয়ালন্দ থানার ওসি আবু তাইয়াবীর বলেন, ট্রলারে অবৈধভাবে যাত্রী পারাপার বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ট্রলারকে জরিমানাও করা হয়েছে। এরপরও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ট্রলার মালিক যাত্রী পারাপার করছে। এ বিষয়ে আরো কঠোর অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. ফিরোজ শেখ বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। দিনে সাধারণ পরিবহন পারাপার বন্ধ থাকায় রাত হলেই পণ্যবাহী গাড়ি পার করতে বেপরোয়া হয়ে উঠে দালাল চক্র। টিকিট না কেটে জোরপূর্বক ট্রাকটি ফেরিতে ওঠানোর চেষ্টাকালে কর্তব্যরত লস্কর বাধা দিলে তাকে মারধর করে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। একইসাথে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং মারধরের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্ত দালালকে ধরতে পুলিশ মাঠে রয়েছে।

Related posts

ব্যবসায়ীর বাড়িতে তাণ্ডব, মামলা নিচ্ছে না পুলিশ

News Desk

জুড়ীতে মায়ের সাথে নদীতে গোসল করতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

News Desk

এক হাজার ৫৯৪ কেজি চিকিৎসা বর্জ্য উদ্ধার, দুই জনের বিরুদ্ধে মামলা

News Desk

Leave a Comment