Image default
বাংলাদেশ

ভিক্ষা দিলে ফিরিয়ে দেন শুভ

দুই পা দিয়ে চলার শক্তি জন্ম থেকেই হারিয়েছেন। এরপরও বেঁচে থাকার লড়াই করছেন প্রতিবন্ধী তীব্র খান শুভ। যত কষ্টই হোক ভিক্ষাবৃত্তি নয়, একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এজন্য পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ। ভাঙা প্যাডেলচালিত গাড়ি নিয়ে ছুটছেন বরিশাল নগরীর বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। চাওয়া একটাই, ‘ভিক্ষা নয়, আমাকে কাজ দিন।’

নগরীর আমাতনগঞ্জ এলাকায় ঝুপড়ি ঘর ভাড়া নিয়ে ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ চালিয়ে আসছেন শুভ। এজন্য প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তার ভাঙা গাড়িটি নিয়ে কাজের সন্ধানে ঘুরতে থাকেন। এ সময় কেউ ডাক দিয়ে কাজ দেন। আবার কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে গাড়ি থামিয়ে কাজ চান। এটি তার প্রতিদিনের কাজ। যেসব কাজের সমস্যা স্পটে বসে সমাধান করতে পারেন না, তা নিয়ে যান ঝুপড়ি ঘরে। সেখানে ইলেকট্রনিকস মালামাল মেরামতের কিছু জিনিসপত্র রয়েছে। তা দিয়ে অচল জিনিস সচলের চেষ্টা চালান।

এরপর তা নিয়ে যথা স্থানে পৌঁছে দিয়ে মজুরি নেন। দিনে কোনোদিন সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। আয় যাই হোক তাতেই খুশি। কারণ তিনি ভিক্ষা করছেন না, কাজের বিনিময়ে উপার্জন করছেন। কেউ তাকে ভিক্ষুক ভেবে সহায়তা দিলে ফিরিয়ে দেন।

আমতানগঞ্জ বেলতলা এলাকার একাধিক দোকানি জানান, শুভ ভিক্ষা নেন না। কেউ ভিক্ষা দিলে ফিরিয়ে দিয়ে তার পরিবর্তে কাজ চান। তাদের সামনে এই ধরনের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। এ কারণে এলাকাবাসী তাকে ভালো চোখে দেখেন এবং কাজ দেওয়ার চেষ্টা করেন।

শুভর প্রতিবেশী বেলায়েত হোসেন বলেন, শুভর মুখটা মায়ায় ভরা। খুব ভালো ছেলে। তার সঙ্গে কেউ থাকে না। এজন্য খাবার থেকে শুরু করে সব ধরনের সাহায্য করেন প্রতিবেশীরা। শুভ বড় কারিগর হবে- এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।

যেসব কাজের সমস্যা স্পটে বসে সমাধান করতে পারেন না, তা নিয়ে যান ঝুপড়ি ঘরে

শুভ জানান, তিনি হিজলা উপজেলার বাসিন্দা। তার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও মাকে নিয়ে সংসার। এক ভাই ঢাকায় মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। অপর ভাই লঞ্চে রুটি বিক্রি করেন। বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস দোকানের কারিগরের কাছ থেকে কাজ শিখেছেন। এছাড়া ইউটিউব দেখে বড় যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ শিখেছেন। ওই শিক্ষা এখন কাজে লাগাচ্ছেন।

শুভ বলেন, ‘আমি মোবাইল, রাইস কুকার, বৈদ্যুতিক বাতি, আয়রন থেকে শুরু করে সব ধরনের ছোটবড় বিকল যন্ত্রপাতি মেরামত করতে পারি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। ভিক্ষা নয়, আমি একটি জায়গায় বসে কাজ করতে চাই। কেউ একটা দোকান করে দিলে প্রয়োজনে আয় করে ওই টাকা পরিশোধ করে দেবো।’

বরিশাল সমাজসেবা অধিদফতরের বিভাগীয় উপপরিচালক আল মামুন তালুকদার বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন আর্থিক সহায়তার খাত রয়েছে। সেখান থেকে অনুদান নিয়ে শুভকে ছোট একটা দোকান করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।’

Source link

Related posts

মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত বেড়ে ৭

News Desk

ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলা, পোস্টমাস্টার গ্রেফতার

News Desk

আরও ১৭ লাখ সিনোফার্মের টিকা দেশে পৌঁছাল

News Desk

Leave a Comment