Image default
বাংলাদেশ

বাড়তি টাকা ছাড়া সংশোধন হচ্ছে না জন্মসনদ

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মারুফা খাতুন। জন্মসনদে তার জন্ম তারিখ এবং পিতা-মাতার নামের বানান ভুল। সংশোধনের জন্য যান ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে তাকে সরকারি ফির অতিরিক্ত চারগুণ টাকা গুণতে হয়েছে।

কলেজছাত্র মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা-মা এবং আমার জন্মসনদ সংশোধনের জন্য বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলাম। তিনটি সংশোধনের জন্য তারা আমার কাছ থেকে ৬০০টাকা এবং বাবা-মায়ের নাম ও জন্ম তারিখের দুই জায়গায় ভুল থাকায় আরো ২৫০ টাকা নিয়েছে।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদেই ফির অতিরিক্ত চার থেকে ছয়গুণ টাকা নেয়ার এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ইউনিক আইডি ও প্রোফাইল তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে তথ্য চেয়েছে সরকার। এসব তথ্যের মধ্যে শিক্ষার্থী ও তার পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধনসনদও চাওয়া হয়েছে। জন্ম সনদের ত্রুটি সমাধানের জন্য অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের চাপে এখন হিমশিম খাচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরতরা।

তারা জানান, শিক্ষার্থীদের অনেকের জন্মসনদ ও শিক্ষাগত সনদে দেয়া তথ্যের মিল নেই। পিতা-মাতার নামের বানান ভূল। জন্ম তারিখের মিল নেই। এসব কারণে ইউনিয়ন পরিষদে শিক্ষার্থী ও অভিভাকদের চাপ বেড়েছে বহুগুনে।

সরেজমিনে উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দেখা যায়, সংশোধনের আবেদনের জন্য ১০০-১৫০টাকা নেয়া হচ্ছে। এরপর বিনা ফিসে সনদ সরবরাহের কথা থাকলেও তারা পূণরায় একই পরিমাণ টাকা নিয়ে সনদ দিচ্ছেন। এতে দেখা গেছে তারা একটি সনদের জন্য ৩০০টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ১০০টাকা এবং জন্ম তারিখ ব্যতীত পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফি ৫০টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সংশোধনের পর সনদের কপি বিনা ফিসে সরবরাহের কথাও বলা হয়েছে।

উপজেলার নিখড়হাটা গ্রামের এক অভিভাবক আলি হাসান অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে মেয়েদের স্কুলের জন্য আটটি জন্ম সনদ সংশোধন করেছি বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। তারা আমার কাছ থেকে ৩০০টাকা করে মোট ২হাজার ৪০০টাকা নিয়েছে। টাকা না দেয়া পর্যন্ত জন্ম সনদ সংশোধনের কপি হাতে পাইনি। এরকম টাকা লাগলে ছেলে মেয়েকে পড়ানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।

এভাবে টাকা নেয়ার বিষয়টি ওই ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলাম স্বীকার করেছেন। এ নিয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নূর ইসলাম জানান, উদ্যোক্তার মাধ্যমেই জানলাম সে সংশোধনে ৩০০করে টাকা নিচ্ছে। তবে উদ্যোক্তাদের খরচ এবং সরকারি ফিসহ একবারই ১০০ থেকে ১৫০টাকা নেয়ার জন্য আবারও বলেছি।

পরিষদের চেয়ারম্যান পান্নু মোল্যা বলেন, প্রতিদিন দুই-তিন ঘণ্টা পরিষদে থাকি। এরকম তো নেয়ার কথা না। তারপরেও আমি দেখছি।

টাকা জোগাড় করতে না পেরে অনেক অভিভাককে ইউনিয়ন পরিষদে এসে ঘুরতে দেখা গেছে। দীঘা ইউনিয়ন পরিষদে আসা এক অভিভাবক জানান, “আমার ছেলের, আমার আর আমার স্ত্রীর জন্মসনদ সংশোধন করা লাগবে। ৬০০টাকা চাইছে। আড়াইশ টাকা নিয়ে আইছি। এখনও সংশোধন করাতে পারিনি। ”

বিনা ফিসে সংশোধিত সনদ সরবরাহের কথা থাকলেও টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাবুখালী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বিকাশ বিশ্বাস। তিনি জানান, উদ্যোক্তাদের মাধ্যমেই সংশোধিত কপি দিচ্ছি, তারা কিছু টাকা নিচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Related posts

কুমিল্লার সেই মণ্ডপে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে দুর্গাপূজা

News Desk

সিগারেটের আগুনে পুড়েছে পিকনিকের বাস, অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন শিক্ষার্থীরা

News Desk

তিনদিন পরপর এমপি-মন্ত্রীদের করোনা টেস্ট

News Desk

Leave a Comment