Image default
বাংলাদেশ

পানির অভাবে ২০ হাজার হেক্টর ধানক্ষেত নষ্ট হওয়ার শঙ্কা

মৌলভীবাজারে খরায় ও সেচের পানির সংকটে বোরো আবাদকৃত জমিগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। অনাবৃষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি খরায় অধিকাংশ পানির উৎসস্থল খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের সেচ পাম্প বন্ধ রয়েছে। এতে জেলার অন্তত ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে হালকা বৃষ্টি হয়েছিল। এরপর এক সপ্তাহ ধরে তাপদাহ চলছে। এখন অধিকাংশ ফসলি জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। মরে যাচ্ছে আবাদকৃত বোরো ধান। 

হাকালুকি হাওরের ভূকশিমইল ইউনিয়নের কৃষক রফিজ মিয়া, রহিম মিয়া ও করিম মিয়া জানান, হাওরের বিল এলাকায় ধান ভালো হলেও পানিশূন্যতায় ক্ষেত শুকিয়ে ধানগাছ মরে যাচ্ছে। একই অবস্থা জেলার অন্যান্য হাওর তীরবর্তী এলাকার বোরো চাষিদের। কোথাও পানি পাচ্ছেন না তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর হাওর অঞ্চলের উপরি ভাগে ২৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর বোরো ধান আবাদ হয়েছে। অনেক জমিতে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

সদর উপজেলার কৃষক পাবুল মিয়া বলেন, ‘এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবো ভেবেছি। খরার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। তবু হাল ছাড়ছি না। কখন খালে পানি আসবে, আর সেচ পাম্প চালু করে জমিতে পানি দিতে পারবো, সে চিন্তায় রাত জেগে বসে থাকি। বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হতো।’

একই এলাকার গোবিন্দ সুত্রধর বলেন, ‘১২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। আমার ১২ বিঘা জমিসহ অন্যান্য কৃষকদের ৫০-৬০ বিঘা জমিতে মেশিন দিতে সেচ দিতাম। সেচ কার্যক্রম চালাতে একটি বটগাছের নিচে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে রাত্রিযাপন করছি। কিন্তু খালে পানি না থাকায় সেচ দিতে পারছি না। জমি শুকিয়ে ধানগাছ মরে যাচ্ছে।’

ওই এলাকার কৃষক শফিক মিয়া, বশির মিয়া, পংকী মিয়া, রাহেলা বেগম ও নিতাই দাস জানান, বোরো ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পাহাড় থেকে আসা কুদালী ও ডেউয়া ছড়ার দুই পাশে এ বছর প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। চারা লাগানোর পর ছড়া ও খাল থেকে পানি দিয়ে সেচ দিয়ে আসছিলেন কৃষকরা। দীর্ঘমেয়াদি খরার কারণে ছড়া এবং খাল শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ পাম্প বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের দাবি, মনু নদী প্রকল্প থেকে সেচ ব্যবস্থা চালু হলে পানি সংকট থাকতো না। আরও অধিক অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আসতো।

দীর্ঘমেয়াদি খরায় অধিকাংশ পানির উৎসস্থল খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের সেচ পাম্প বন্ধ

একই অবস্থা হাকালুকি, কাউয়াদিঘি, হাইল হাওর ও কমলগঞ্জের আদমপুর, মাধবপুর এবং ইসলামপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায়। এসব এলাকার ক্ষেতগুলোও শুকিয়ে গেছে।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, ‘চলতি বছর বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর বোরো আবাদ বেড়ে ৫৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর হয়েছে। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছিল। এই বৃষ্টি আবাদকৃত বোরো ধানের সহায়ক। এ বছর পোকা-মাকড়ের আক্রমণ নেই। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা স্থানীয় কৃষকদের ধানের পরিচর্যায় বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কুদালী ছড়ার পাঁচ কিলোমিটার খননকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আমাদের স্লুইসগেট নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। স্লুইসগেট দিয়ে যদি শুষ্ক মৌসুমে সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে ওই এলাকায় আরও সাত হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্ভব হবে। কুদালী ছড়াকে সেচ প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে আপাতত পানির ব্যবস্থা নেই।’

Source link

Related posts

নিত্য নতুন কৌশলে দেশে ঢুকছে মাদক

News Desk

অস্ত্র উদ্ধারের ১১ বছর পর দুই আসামির কারাদণ্ড

News Desk

চট্টগ্রামে সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে

News Desk

Leave a Comment