Image default
বাংলাদেশ

দুধের সরবরাহ বাড়াতে ৩০০ কালেকশন সেন্টার

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৩০০ মিল্ক কালেকশন সেন্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে দুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে ন্যায্যমূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারবেন খামারিরা। এ প্রকল্পের আওতায় খামারিদের বাড়তি দুধ উৎপাদনে প্রশিক্ষিত করা হবে। এছাড়া অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে পাঁচ বছরে দেশে দুধের উৎপাদন ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা এই প্রকল্পের লক্ষ্য।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়নের প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০১৯ সালে, যা চলবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। এ প্রকল্পের আওতায় প্রটোকল-নীতি প্রণয়ন ও অনুসরণ এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০০টি ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ১৭৫টিতে কুলিং সিস্টেম দেয়া হবে।

এছাড়া আঞ্চলিক পর্যায়ে ২০টি ‘ডেইরি হাব’ স্থাপন, পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের জন্য মেট্রো পর্যায়ে তিনটি আধুনিক মানের স্লটার হাউজ নির্মাণ, জেলা পর্যায়ে ২০টি স্লটার হাউজ নির্মাণ ও উপজেলা-গ্রোউথ সেন্টার পর্যায়ে ১৯২টি স্লটার স্লাব-মাংসের বাজার উন্নয়ন, খামারের বর্জ্য তথা গোবর দিয়ে বিকল্প জ্বালানি ও বায়ো ফার্টিলাইজার উৎপাদন এবং বিপণনের লক্ষ্যে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন, ভেটেরিনারি সেবা আরও বেগবান করা ও মান উন্নয়নের জন্য উপজেলা পর্যায়ে মিনি ডায়াগনস্টিক ল্যাব স্থাপন, মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক পরিচালনা, ভোক্তা সৃষ্টি ও পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পাইলট আকারে স্কুল মিল্ক কর্মসূচি পরিচালনা এবং প্রাণিসম্পদ বিমার মতো কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

জানা গেছে, দুধের সেলফ লাইফ কম হওয়ায় অনেক দুধ নষ্ট হয়ে যায়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এটি অনেকটা রোধ করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের আওতায় যেসব কালেকশন সেন্টার তৈরি করা হবে, সেটি হবে উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে। প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে। একটি সেন্টার তৈরিতে যে অর্থ প্রয়োজন হবে তার সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা করা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করেই এসব সেন্টার গড়ে তোলা হবে। যেসব স্থানে যাতায়াত ব্যবস্থা কিছুটা খারাপ, সেদিকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে।

কালেকশন সেন্টার থেকে জেলাভিত্তিক বৃহৎ সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পর সংগ্রহকৃত দুধের মান খারাপের দিকে গেলে তা দিয়ে তাৎক্ষণিক দধি বা অন্য কোনো পণ্যে ব্যবহার করা হবে। এতে দুধের অপচয় রোধ হবে। একই সঙ্গে কৃষকরা যাতে বাড়তি দুধ উৎপাদন করতে পারেন সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে। ফলে প্রশিক্ষিত খামারিরা বাড়তি দুধ উৎপাদন করতে পারবেন।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পটির মোট বিনিয়োগ ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা প্রাণিসম্পদ সেক্টরে সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি, গাভি-ষাঁড়, ছাগল-ভেড়া এবং হাঁস-মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী দ্বারা খামারিদের দক্ষতা উন্নয়ন, দুগ্ধ বিপণনের জন্য বাজার সংযোগ, পণ্য বহুমুখীকরণ, মূল্য সংযোজন, স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রাণিজাত আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ফুড সেফটি নিশ্চিতকরণে উৎপাদনকারী, পরিবহনকারী, ব্যবসায়ী, কারিগর, ভোক্তা সব স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে এ প্রকল্প।

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশে ৩০০ মিল্ক কালেকশন সেন্টার করা হবে। তার মধ্যে ১৭৫টিতে কুলিং সিস্টেম দেয়া হবে। সবগুলোতে কুলিং সিস্টেম প্রয়োজন হবে না। কুলিং সেন্টার প্রয়োজন হলে বেসরকারি খাতের যারা উদ্যোক্তা তারা নিজেরাও সেটি করে নিতে পারবেন। প্রকল্পের মাধ্যমে ডেইরি খাত আরও সুশৃঙ্খল হবে। প্রথমে কৃষক যে দুধ বিক্রি করবে সেগুলো ভালো কনটেইনারে কালেকশন সেন্টারে যাবে। সেই কালেকশন সেন্টারের মালিক হবেন ব্যবসায়ীরা। এরপর কালেকশন সেন্টারের দুধ আঞ্চলিক হাবে যাবে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে প্রসেসিং প্লান্টে। এরপর সব প্রক্রিয়া শেষে ভোক্তার কাছে চলে যাবে।

প্রকল্প এলাকায় প্রযুক্তি সম্প্রসারণের সেবা খামারির দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪ হাজার ২০০ জন লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার, উপজেলা পর্যায়ে ৯৩০ জন লাইভস্টক ফিল্ড অ্যাসিস্টেন্ট এবং ৪৬৫ জন প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন তদারকি ও রিপোর্ট প্রদানের জন্য ২০ জন মনিটরিং অফিসার ও তিনজন সহকারী প্রকৌশলী কর্মরত।

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রাব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘কালেকশন সেন্টারগুলো মূলত বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নিয়ে করা হবে। প্রকল্প থেকে উদ্যোক্তাদের প্রস্তাবনা বিবেচনা করে কালেকশন সেন্টার তৈরিতে মোট খরচের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ সহায়তা করা হবে। এ লক্ষ্যে আমরা আহ্বান জানাবো, কোনো উদ্যোক্তা যদি কালেকশন সেন্টার করতে চান, সেখানে ৫ লাখ টাকা লাগলে আমরা সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ সহায়তা করব। সেই সহায়তা সরাসরি টাকা দিয়ে নয়, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেব আমরা। প্রকল্প শেষে সেই সেন্টারটির মালিক হবেন উদ্যোক্তাই। প্রকল্প শেষ হবে তবে কালেকশন সেন্টারটি টিকে থাকবে। কেস বাই কেস এটি হ্যান্ডেল করা হবে। এটি মূল্যায়নের জন্য আমাদের সঙ্গে ইন্টারন্যাশন অ্যাগ্রি বিজনেস থাকবে। তারা তাদের গ্লোবাল নলেজ দিয়ে সাপোর্ট দেবে। প্রকল্পের লক্ষ্য পাঁচ বছরে দেশে দুধের উৎপাদন ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা।

তিনি বলেন, ‘প্রাণ, আড়ংসহ বড়-ছোট উদ্যোক্তারা এ সেন্টার তৈরিতে এগিয়ে আসতে পারে। আমাদের কাছে সবাই সমান। প্রকল্পের আওতায় ৪৬৬টি উপজেলা। সবগুলো উপজেলা সমানভাবে দুধ উৎপাদনের সক্ষমতা দেখায় না। যেখানে দুধ বেশি পাওয়া যায়, উদ্যোক্তা সেখানে যেতে চায়। যেটা নতুন এলাকা সেখানে উদ্যোক্তারা যেতে চায় না। রাস্তা খারাপ হলে, বিদ্যুতের সমস্যা থাকলে তারা আরও যেতে চায় না। নতুন নতুন জায়গায় তাদের অ্যাকটিভিটি বাড়াতে আমাদের চেষ্টা থাকবে। নতুন যেসব এলাকা ডেভেলপ করছে উদ্যোক্তাদের সেখানে নিতে হবে। আমরা সাপোর্ট দিয়ে উদ্যাক্তাদের সেদিকে মুভ করাতে চাই। একটি উপজেলায় প্রয়োজনের ভিত্তিতে একাধিক কালেকশন সেন্টার হতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নে যে পরিমাণে গাভি আছে, পুরো উপজেলায় সে পরিমাণ গাভি নেই। তাই সেখানে একাধিক সেন্টার হতেই পারে। এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে আমাদের যে খামারিরা দুর্গম এলাকায় থাকেন, তারা অনেক সময় দুধের ন্যায্যমূল্য পান না বলে অভিযোগ করেন। উৎপাদন বাড়াতে খামারি পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যটা খুব জরুরি। তার অংশ হিসেবে এটা আমরা করছি। এখান থেকে নিয়ে যে জায়গায় বেশি চাহিদা আছে সেখানে দুধ নিয়ে বিক্রি করবে, এটা হলো মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া দুধ দিয়ে অন্যান্য যেসব পণ্য তৈরি করা হয়, যেমন- ঘি, পনির, মিষ্টি এসব পণ্য তৈরিতে সাপ্লাই নিশ্চিত করা যাবে।

তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কারণ আমাদের উৎপাদিত দুধের সিংহভাগ মিষ্টির দোকানের ওপর নির্ভরশীল। এখন মিষ্টির দোকান দুধ কিনতে না চাইলে এবং সিন্ডিকেট তৈরি করলে খামারিরা বিপদে পড়ে যায়। সবার কাছে দুধ পৌঁছাতে পারলে সাধারণ মানুষও দুধ খেতে পারবে এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পজিটিভ একটি রেজাল্ট আসবে।

Related posts

ফুচকা খেতে গিয়ে শিশু নিখোঁজ, লাশ মিলল খালে

News Desk

অবিশ্বাস্য! শামির ৪ বলে ৪ উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া (ভিডিও)

News Desk

সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান গোর-এ শহীদে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা 

News Desk

Leave a Comment