Image default
বাংলাদেশ

তক্ষক, সাপের বিষ পাচার করতেন আকুল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অস্ত্র কারখানা থেকে চোরাই পথে পাঠানো অস্ত্র ও গুলি যশোরের বেনাপোল সীমান্তে গ্রহণ করতেন যশোরের ছাত্রলীগ নেতা আকুল হোসাইন। তিনি অস্ত্র কারবারের পাশাপাশি মহাবিপন্ন গিরগিটিজাতীয় প্রাণী তক্ষক, ভারতীয় ধাতব মুদ্রা ও সাপের বিষ পাচার করতেন। পাশাপাশি হুন্ডির কারবারেও জড়িত ছিলেন তিনি। আকুল যশোরের শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হন।

আকুল (৩৭) ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে করা অস্ত্র আইনের মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি ডিবির গুলশান বিভাগের দারুস সালাম থানায় হওয়া ওই মামলায় আকুল ও তার চার সহযোগীর বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন আকুলের সহযোগী আজিমুর রহমান (২৬), ইলিয়াস হোসেন (৩১), মিলন হোসেন (৩৯) ও ফজলুর রহমান (৩৬)। আকুলের বাড়ি যশোরের বেনাপোল থানার বাহাদুরপুর রোডে। আকুলসহ সহযোগীরা এখন কারাগারে। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গাবতলী দিয়ে অস্ত্রের চালান নিয়ে ঢোকার পথে বিদেশি আটটি পিস্তল, বিপুলসংখ্যক গুলি, ম্যাগাজিনসহ ছাত্রলীগের নেতা আকুলসহ অস্ত্র কারবারি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবির গুলশান বিভাগ।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আকুল ভারত থেকে যেমন অস্ত্রের চালান আনতেন, তেমনি তিনি দেশ থেকে ভারতের চোরাকারবারিদের কাছে তক্ষক, ভারতীয় ধাতব মুদ্রা, সীমান্ত খুঁটি ও সাপের বিষ পাচার করতেন। পাশাপাশি হুন্ডি করে টাকা পাঠাতেন। আকুল আন্তর্দেশীয় অস্ত্র কারবারি চক্রের সদস্য। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ডিবি কর্মকর্তাদের বলেন, গত ছয় বছরে তিনি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সারা দেশে সন্ত্রাসী ও অস্ত্র কারবারিদের কাছে গুলিসহ দুই শতাধিক অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করেছেন। গত বছর রাজধানীর ভাসানটেকে এক ঠিকাদারকে গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস অনুসন্ধানে নেমে আকুল চক্রের সন্ধান পায় ডিবির গুলশান বিভাগ। ঠিকাদারকে গুলি করা সন্ত্রাসীরা আকুলের কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছিলেন।

ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, আকুলের অবৈধ অস্ত্র ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে রাজনীতিক, টেন্ডারবাজ, ভূমিদস্যু, অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, ডাকাত ও ভূমিদস্যু। ডিবির কাছে গ্রেপ্তারের আগে আকুলের বিরুদ্ধে বেনাপোল পোর্ট থানায় ছিনতাই ও বিস্ফোরকসহ তিনটি মামলা ছিল।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আকুল ও তাঁর সহযোগীরা ডিবি কর্মকর্তাদের বলেছেন, ভারতের অস্ত্র কারবারি মেহেদী হাসানের বাড়ি যশোরের শার্শায়। শার্শায় থাকাকালে মেহেদীর সঙ্গে আকুলের পরিচয় হয়। যশোরের একটি ফৌজদারি মামলায় মেহেদীর বাবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এরপর মেহেদী ভারতে গিয়ে বনগাঁয়ে বাড়ি করলেও আকুলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। বনগাঁয়ের চরইগাছির বাসিন্দা দীপঙ্কর কুমারের সঙ্গে মেহেদী অস্ত্রের কারবারে জড়িয়ে পড়েন। মেহেদীর মাধ্যমে অস্ত্র কারবারি দীপঙ্কর, মো. জামাল ও রানার সঙ্গে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে আকুলের পরিচয় হয়। ছয় বছর ধরে আকুল তাঁদের কাছ থেকে অস্ত্রের চালান আনতেন। দীপঙ্কর ও মেহেদী বনগাঁয়ে গড়ে ওঠা অবৈধ অস্ত্রের কারখানা থেকে পাইকারি কিনে সেই অস্ত্রের চালান বনগাঁয়ের আবদুল্লাহ ও নাসির উদ্দিনসহ বাহকদের মাধ্যমে আকুলের কাছে পাঠাতেন। ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা পিস্তল ও রিভলবার পলিথিনে মুড়িয়ে কিছু টাকার বিনিময়ে বাহকদের হাতে তুলে দিতেন। তাঁরা সেই অস্ত্র সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে ধানখেতে কাদায় পুঁতে রেখে দিতেন। সেখান থেকে আকুলের সহযোগীরা সময় ও সুযোগমতো অস্ত্রগুলো নিয়ে আসতেন। আকুল বনগাঁও থেকে প্রতিটি আগ্নেয়াস্ত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় কিনতেন এবং দেশের বাজারে সেসব অবৈধ অস্ত্র ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। অস্ত্র বিক্রিতে আকুলের সারা দেশে ১৩৫ সদস্য সক্রিয় রয়েছেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থে আকুল যশোরের শার্শায় সাত বিঘা জমি কিনেছেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালের ১৩ জুন বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুলফিকার আলীর (মন্টু) ওপর বোমা হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনার পরদিন পুলিশ ১৪ জুন আকুলের বেনাপোলের ভাড়াবাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে তাঁর বাসা থেকে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ পিস্তলের ৩ রাউন্ড গুলি, ১২টি ম্যাগাজিন, দেশি ৮টি অস্ত্র ও ৩৩ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।

যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার সদ্য বিদায়ী ওসি মামুন খান প্রথম আলোকে বলেন, আকুল হোসেন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তিনি রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে চোরাচালান, টেন্ডারবাজি, মাদক কারবার, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি ও অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে সখ্য রেখে সহযোগীদের নিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য কেনাবেচা করলেও তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মারামারি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মাত্র তিনটি মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালে আকুলের বাসা থেকে অস্ত্র, বোমা ও গুলি উদ্ধার হলেও ওই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

Related posts

এবার তামান্নার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী

News Desk

শিক্ষক হত্যা: ৫ দিন পর স্কুলে পাঠদান শুরু

News Desk

আগের ধকল না কাটতেই আবারও ডুবেছে সুনামগঞ্জ 

News Desk

Leave a Comment