Image default
বাংলাদেশ

ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে না স্বপ্নের মেট্রোরেল

দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত মেট্রো ট্রেন। এটি উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত উড়ালপথে চলবে। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ পর্যন্ত চালুর কথা। কিন্তু কোভিড মহামারীর কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত কাজটি সময়মতো করা যাচ্ছে না করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে। প্রথম মেট্রো সেট গত ২৩ এপ্রিল উত্তরা ডিপোয় পৌঁছেছে। মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকা শহরে বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার টনের বেশি কার্বন নিঃসরণ কমাবে। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে যানজট কমিয়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১০০ মিনিটের ভ্রমণ সময় মেট্রো রেললাইন চালুর মাধ্যমে মাত্র ৩৬ মিনিটে নেমে আসবে।

মেট্রোরেল চালু করার বিষয়ে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার মেট্রোরেল উদ্বোধন করার কথা ছিল, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু বলা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এমআরটি-৬ শেষ করার কথা ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। কিন্তু চলমান বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এখন সেই সময়সীমার ব্যত্যয় ঘটেছে। আগামী আগস্টে পারফরম্যান্স টেস্ট করা হবে। এর পর ‘ইনট্রিগেটেড টেস্ট’ করে হবে ট্রায়াল রান। ট্রেনটি ডিপোর ভেতরের সব রেললাইনের ওপর দিয়ে

চালানো হবে এবং তার পর ভায়াডাক্টেরের (রেলসেতু) ওপর দিয়েও চালানো হবে।

এমআরটি-৬ নামে পরিচিত নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ট্রেন সেট মোংলা বন্দরে পৌঁছাবে ১৬ জুন। তৃতীয় ও চতুর্থ মেট্রো ট্রেন সেটের শিপমেন্টের সম্ভাব্য তারিখ ১১ জুন এবং বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারে ১৩ আগস্ট। পঞ্চম ট্রেন সেট জাপান থেকে শিপমেন্ট হতে পারে ১৬ জুলাই। দেশে আসবে ১৭ সেপ্টেম্বর। এভাবে জাপান থেকে মোট ২৪ সেট কোচ আসবে।

গত ১১ মে বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে উত্তরায় বৈদ্যুতিক ট্রেনটি ওয়ার্কশপ থেকে চালিয়ে কোচ আনলোডিং জোনে নিয়ে আসা হয়। ছয়টি বগির সেট নিয়ে ট্রেনটি ওয়ার্কশপ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার পাড়ি দেয়। জাপানের কাওয়াসাকি কোম্পানি ট্রেনগুলোর নির্মাতা। তাদেরই একজন চালক ট্রেনটি চালিয়ে নিয়ে আসেন। মেট্রোরেলে প্রতিটি সেটে থাকবে চারটি যাত্রীবাহী কোচ, দুদিকে দুটো ইঞ্জিন। ট্রেনগুলোয় ডিসি ১ হাজার ৫০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। স্টেইনলেস স্টিল বডির ট্রেনগুলোয় থাকবে লম্বালম্বি আসন। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দুটি হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির দুপাশে থাকবে চারটি করে দরজা। জাপানি স্ট্যান্ডার্ডের নিরাপত্তাব্যবস্থা সংবলিত প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে ১ হাজার ৭৩৮ জন।

দেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণাধীন আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হচ্ছে। এ অংশের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে মেট্রোরেল প্রকল্পে জনবলের স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চলমান। গাবতলী ও পঞ্চবটি ইয়ার্ডে ফিল্ড হাসপাতাল চালু রেখেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। গত এপ্রিল পর্যন্ত ৬৬১ জন করোনায় আক্রান্ত হলেও কেউ মারা যাননি।

জানা গেছে, ডিপোর অভ্যন্তরে রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের সাড়ে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ওপর বসানো হয়েছে রেললাইন। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনের কনকোর্স ছাদ নির্মাণ শেষ। বর্তমানে মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এবং আগারগাঁও স্টেশনের কনকোর্স ছাদ নির্মাণের কাজ চলমান। আগারগাঁও থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত অংশের ৩ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণকাজ চলমান। এভাবে গেল পাঁচটি প্যাকেজ। প্যাকেজ ৬-এর অধীনে কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও চারটি স্টেশন নির্মাণকাজ চলমান আছে। বর্তমানে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনের নির্মাণকাজ চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনের ৯০ মিটার কনকোর্স লেভেল সাব কস্টিং শেষ। প্যাকেজ ৭-এর অধীনে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম। ভায়াডাক্টের ওপর মেইন কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক অ্যালাইনমেন্টের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রেললাইন স্থাপন হয়েছে ১০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। ভায়াডাক্টের ওপর আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত নয় কিলোমিটার ট্র্যাকে ওভারহেড কেটিনারি সিস্টেমের (ওসিএস) পোর্টাল স্থাপন শেষ হয়ে গেছে। ওয়ারিং কাজ হয়েছে পাঁচ কিলোমিটার। সার্বিক বাস্তব অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। ৮ নম্বর প্যাকেজের আওতায় রোলিংস্টক তথা রেলকোচ কেনা হচ্ছে। এ ছাড়া ডিপোর ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এ প্যাকেজের আওতায় মেট্রোরেলের প্রথম চালান ইতোমধ্যে এসে গেছে। জাপানে তৈরি স্টেইনলেস স্টিলের কোচগুলোর ভেতর লম্বালম্বি দুপাশে রয়েছে বসার আসন। প্রতিটি কোচে দুটি হুইলচেয়ার রাখারও জায়গা আছে। ডিপোয় এখন প্রথম সেটের ‘ফাংশনাল’ কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। এর পর ভায়াডাক্টের ওপরে মেইন লাইনে পরীক্ষা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সমন্বিত টেস্টের পর ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বৈদ্যুতিক এই ট্রেন চালু হলে এর সুফল ভোগ করবেন এ রুটের বিপুল কর্মজীবী মানুষ। জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়া এই পরিবহনব্যবস্থা নিরাপদ, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব।

Related posts

বাংলাদেশকে টপকে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় ভিয়েতনাম

News Desk

মরে যাচ্ছে আলু গাছ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

News Desk

ভূমিকম্প আতঙ্কে সিলেট শহর ছাড়ছেন মানুষ

News Desk

Leave a Comment