Image default
বাংলাদেশ

জাতীয় সঙ্গীতের অবহেলিত সুরকার

জাতীয় সংগীত আমাদের গর্বের এবং অহংকারের জায়গা। এ গানের গীতিকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এই গানের সুর নেওয়া হয়েছিলো বাংলাদেশেরই একজন ডাকহরকরার গানের সুর থেকে তা কয়জন জানি? আমাদের এই অজ্ঞতার কারনে আমাদের জাতীয় সংগীতের সুরকার গগন হরকরা রয়ে গেছেন আমাদের বিস্মৃতির আড়ালে। হারিয়ে গেছে তার ভীটে মাটিও। আজ আমরা গগন হরকরার গল্পই শুনবো।

গগন হরকরার প্রকৃত নাম গগন চন্দ্র দাশ। তিনি আনুমানিক ১৮৪৫, আবার কারও কারও মতে ১৮৪০ সালে বর্তমান কুষ্টিয়ার শিলাইদহের আরপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা মাতা সম্পর্কে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। অজ পাড়াগায়ে জন্ম নিলেও তিনি একেবারে নিরক্ষর ছিলেন না। তিনি কৃষিকাজ দিয়ে জীবন শুরু করলেও ডাক আফিসে চাকরি পায়। সে সময় কুষ্টিয়া অঞ্চলে লালন শাহের বাউল গান প্রচন্ড জনপ্রিয়। সে এলাকার লোকদের মধ্যে লালনের প্রভাবও ছিলো লক্ষ্যনীয়। গগনও ব্যতিক্রম ছিলেন না।

তিনি ডাক অফিসে চিঠি বিলি করার কাজের পাশাপাশি সংগীত চর্চাও করতেন। যখন পিঠে চিঠির বোঝা নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে হেটে বেড়াতেন তখন তার মুখে থাকতো নানা বাউল গান। মানুষজন মুগ্ধ হয়ে তার গান শুনতো। সেসময় যারা চিঠি বিলি করার কাজ করতেন তাদেরকে ডাক হরকরা বলা হতো। তাই গগণ চন্দ্রের নামও হয়ে যায় গগণ হরকরা। গগণ হরকরা চিঠি বিলানোর কাজে শিলাইদহের কুঠিবাড়িতেও আসতেন। আর সেখানেই আসতেন জমিদার রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি জমিদারি কাজের ফাকে গান শুনতে ভালোবাসতেন।

সে সুযোগে গগন হরকরা তাকে তার রচিত বাউল গান শোনান। শুনে রবি ঠাকুর মুগ্ধ হোন। গগন হরকরার রচিত এবং সুরারোপিত “ আমি কোথায় পাবো তারে” তার মনকে উদ্বেলিত করে। তিনি এই গানটির কথা উল্লেখ করে “An Indian Folk Religion” লিখেন, “The first Baul song, which I chanced to hear with any attention, profoundly stirred my mind.”

এরপরে রবিন্দ্রনাথের সাথে গগনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ তাকে চিঠি লিখতেন বলে জানা যায়। রবি ঠাকুরের ভাইয়ের মেয়ে সরলা দেবী তার গান সংগ্রহ ও প্রকাশ করেন। রবিন্দ্রনাথের ছেলে বালেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৮৯ সালে গগনের সমস্ত গান সংগ্রহ করে প্রকাশ করেন। এরপরে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে ১৯০৫ সালে রবি ঠাকুর “আমার সোনার বাংলা” গানটি রচনা করেন। এই গানে তিনি গগন হরকরার “ আমি কোথায় পাবো তারে” গানটির সুর ভেংগে ব্যবহার করা হয়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গানটি মুক্তিযোদ্ধারা গাইতেন। এটি তাদের যুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাতো। পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত ঘোষণা করা হয়। তবে এসবের কিছুই গগণ দেখে যেতে পারেননি। যদিও প্রচলিত আছে যে গগণ ১৯১০ সালে মারা যান। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তার প্রবন্ধে লিখেছিলেন , গগণ কৌশরকাল সম্পুর্ণ করার আগেই মৃত্যু বরণ করেন।

বর্তমানে গগনের ভিটেমাটির কিছুরই অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। গগনের মৃত্যুর পর তার পরিবার শিলাইদহ ত্যাগ করেছিলো বলে জনশ্রুতি আছে।তার ভিটেমাটিতে এখন কেবল মেহগনি গাছ পাওয়া যায়। তার স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ পোস্ট আফিসটিও আর নেই। বর্তমানে সেখানে পুকুর খনন করা হয়েছে। তবে বর্তমানে কুষ্টিয়া শহরে তার একটি মুর্তি স্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষ জাতীয় সংগীতের রচিয়িতা হিসেবে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরকে জানলেও, সুরকার গগন হরকরা আজও অবহেলিত। বাংলা ডায়েরি টিম আশা করে গগন হরকরা তার প্রাপ্য সম্মনটুকু পাবেন।

Related posts

বেনাপোলে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক ১

News Desk

‘নো ইন্টারেস্ট-নো ফি’ সুবিধা চালু করল ব্র্যাক ব্যাংক

News Desk

ডোমারে ধান মাড়াই মেশিনে দুই শিশুর মৃত্যু আটক ২

News Desk

Leave a Comment