Image default
বাংলাদেশ

ঘাটতি না থাকলেও নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে

দামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হযবরল অবস্থা খেজুরের। সাধারণ মানের খেজুর আমদানির খরচ পড়েছে ৪৩ টাকা এবং মাঝারি মানের খেজুরের দাম পড়েছে ১০২ টাকা। অথচ আড়াইশ-তিনশ টাকার নিচে এখন সাধারণ মানের খেজুর খুব একটা পাওয়া যায় না। যা বিক্রি হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১০০ টাকায়।

রমজানে বাড়তি চাহিদাযুক্ত পণ্যগুলোর মজুদে কোন ঘাটতি না থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে তেল, চিনি, ছোলাসহ বেশকিছু পণ্য।

স্থানীয় উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সরকারি সংস্থাগুলো বলছে, রমজানে যেসব পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়, সেগুলোর মজুদ পরিস্থিতিতে কোন সংকট নেই। সাপ্লাই চেইনও স্বাভাবিক রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দাম বৃদ্ধিরও কোন কারণ নেই।

অথচ রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামে বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিনে সরকার নির্ধারিত দাম মানা হচ্ছে না। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বাজারভেদে ১২২-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার এই দাম বেঁধে দিয়েছিল ১১৭ টাকায়।

জানা গেছে, সারা বছর ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদার বিপরীতে গত জুলাই-ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আট মাসেই ১৬.২৩ লাখ টন তেল আমদানি হয়েছে। রমজানে এই পণ্যটির দুই-আড়াই লাখ টন চাহিদা রয়েছে।

সারা বছরের ১৮ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে শুধু রোজাতেই প্রায় দুই লাখ চাহিদা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি সংস্থা চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের কাছে রয়েছে ৪০ হাজার টন। সাপ্লাই চেইনে কোন সমস্যা না থাকলেও পণ্যটি কিছুটা বাড়তি দামেই বিক্রি করতে দেখা গেছে।

খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ টাকায়। কোথাও কোথাও অবশ্য ৬৮ টাকাতেও চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে। অথচ কৃষি বিপনন অধিদপ্তর এবং চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের তথ্য বলছে, চিনির সর্বোচ্চ যৌক্তিক মূল ৬৭-৬৮ টাকা। এর বেশি দামে কেউ চিনি বিক্রি করতে পারবে না।

কারওয়ান বাজারের ভোজ্যতেল ও চিনির পাইকারি ব্যবসায়ী মো. সগির বলেন, পাইকারি পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামই মানা হচ্ছে। কিন্তু খুচরায় বেশি নিলে সে দায় পাইকারি ব্যবসায়ীর না। এক্ষেত্রে সরকারকে মনিটরিং করতে হবে।

জানা গেছে, ছোলার আমদানি মূল্য ৫৫ টাকা। প্রতি কেজি ছোলা খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬৩-৬৭ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকার মধ্যে।

এই পণ্যটির সারা বছর ২.১০ লাখ টন চাহিদা থাকলেও এর বড় অংশ অর্থাৎ প্রায় ৮০ হাজার টনই ব্যবহার হয় রোজায়। এ কারণে প্রতি বছর রোজার আগে পণ্যটির দামও বাড়ে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

রোজায় জনপ্রিয় খাবারগুলোর একটি পেঁয়াজু। যা বানাতে মশুর ডাল ব্যবহার করা হয়। ফলে রোজায় পণ্যটির প্রায় ৮০ হাজার টনের চাহিদা রয়েছে, যেখানে সারা বছর ৫ লাখ টন ডাল দরকার পড়ে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে, প্রতি কেজি মশুর ডালের বড় দানা ও ছোট দানার আমদানি মূল্য ৪১ ও ৭১ টাকা। যা খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৬৯-১০৩ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ খুচরা বাজারে বড় দানার মশুর ডাল প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকা এবং ছোট দানার মশুর ডাল ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ১.৮৩ লাখ টন মশুর ডাল আমদানি হয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন ডাল।

চকবাজারের ডাল ও ছোলার পাইকারি ব্যবসায়ী হাজী শফি মাহমুদ বলেন, বাজার পরিস্থিতি মন্দা। বিক্রিও কম, মজুদও বেশি। এ অবস্থায় দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগই নেই।

শুধু স্থানীয় উৎপাদন ভালো হওয়ায় দেশে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। পণ্যটি ৪০ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। তবে দামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হযবরল অবস্থা খেজুরের। সাধারণ মানের খেজুর আমদানির খরচ পড়েছে ৪৩ টাকা এবং মাঝারি মানের খেজুরের দাম পড়েছে ১০২ টাকা। অথচ আড়াইশ-তিনশ টাকার নিচে এখন সাধারণ মানের খেজুর খুব একটা পাওয়া যায় না। যা বিক্রি হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১০০ টাকায়। মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত দামে, যা বিক্রি হওয়ার কথা ২০০-২৫০ টাকায়। অথচ চলতি মার্চ মাস পর্যন্ত খেজুর আমদানি হয়েছে ৬২ হাজার টন। এর মধ্যে শুধুমাত্র রোজাকেন্দ্রিক আমদানি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দপ্তর ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে রমজানের কয়েকটি পণ্যের সর্বোচ্চ যৌক্তিক খুচরা মূল্যের তালিকা দিয়েছে কৃষি বিপনন অধিদপ্তর।

এ সময় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আমরা বেশ কিছু পণ্যের আমদানি, উৎপাদন ও বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে যৌক্তিক খুচরা মূল্য প্রকাশ করেছি। ব্যবসায়ীরা এর চেয়ে বেশি দামে পণ্যগুলো বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। বাজার মনিটরিং এ বাড়তি দাম নিতে দেখা গেলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

অধিদপ্তর জানায়, ভোক্তা অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে ঢাকায় অন্তত ৩০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। যেখানে এই খুচরা মূল্যকে ভিত্তি ধরে খুচরা দাম পর্যবেক্ষণ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, শক্ত মনিটরিং ও শাস্তির দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে। তা না হলে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার যে প্রবণতা সেটা কমবে না।

Related posts

কক্সবাজারের ইনানীতে পর্যটকদের জন্য চালু হলো ‘কায়াকিং’

News Desk

কুমিল্লায় করোনায় ৪ জনের মৃত্যু

News Desk

নোয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় ২২১ জনের করোনা শনাক্ত

News Desk

Leave a Comment