Image default
বাংলাদেশ

‘গরিবের ডাক্তার’ বুলবুল হত্যা, সংবাদ সম্মেলনে মায়ের আহাজারি

ঢাকায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে রংপুরের গরিবের ডাক্তার খ্যাত দন্ত চিকিৎসক আহামেদ মাহি বুলবুল নিহতের ঘটনায় হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি দাবি করেছে পরিবার। একইসঙ্গে নিহতের দুই সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব সরকারকে বহন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রংপুর নগরীর ভগিবালাপাড়া মহল্লার বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন নিহতের মা বুলবুলি বেগম।

নিহত ডা. বুলবুলের সহপাঠী এসএসসি ৯৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। তার আহাজারিতে সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। এ সময় তার সঙ্গে বুলবুলের স্ত্রী ও দুই সন্তান পাশেই ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বুলবুলের সহপাঠী বন্ধু আশফাক ও হৃদয় বলেন, ‘আহমেদ মাহি বুলবুল একজন সামাজিক ও মানবিক মানুষ ছিলেন। শিশুদের নিয়ে কাজ করতেন। দেশের প্রথম শ্রেণির একজন নাগরিক। তার এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও কোনও উদ্দেশ্য আছে কি-না সেটা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা উচিত।’

ছোট ভাই আহমেদ রাহি বকুল বলেন, ‘এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। এর সঙ্গে পরিচিতদের কেউ জড়িত থাকতে পারে। তা না হলে এত সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার খবর পেলো কীভাবে? আমার ভাই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। ঢাকায় দন্ত চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন। ঠিকাদারি কাজে রবিবার তার নোয়াখালী যাওয়ার কথা ছিল। এখন ভাই নেই। ভাবি এবং দুই শিশু সন্তানসহ আমাদের পরিবারের কী হবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ- আমার ভাইয়ের খুনিদের শনাক্ত করুন।’

অপরদিকে, এলাকাবাসীসহ স্বজনদের দাবি, বুলবুলকে ছিনতাইকারীরা হত্যা করেনি। তারা বলেন, টাকার জন্য ছুরিকাঘাত করলে ছিনতাইকারীরা টাকাপয়সা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যেত। কিন্তু আমরা তো গণমাধ্যমের মাধ্যমে জেনেছি, ছিনতাইয়ের সময় তার কাছে থাকা টাকা নেয়নি। ঘটনাটি পরিকল্পিত হতে পারে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গাফফার হোসেন বলেন, ‘বুলবুলের মৃত্যুতে দুটি সন্তান, স্ত্রী ও তার মাসহ পুরো পরিবারটি এখন অসহায়। অভিভাবকশূন্য এই পরিবারের জন্য সরকারকে কিছু করতে হবে।’ বুলবুলের সন্তান দুটির ভবিষ্যৎ গড়তে এই অসহায় পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

রবিবার (২৭ মার্চ) সকালে ঢাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুল। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সামি নামে দেড় বছর বয়সী ছেলে ও আয়ন নামে আট বছরের মেয়ে রয়েছে বুলবুলের।

সোমবার সকাল ৭টার দিকে তার লাশ ঢাকা থেকে রংপুরের ভগিবালাপাড়ার নিজ বাসায় নেওয়া হয়। বাদ জোহর স্থানীয় রামপুরা জামে মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরি করা অবস্থায় ১৯৯৯ সালে তিনি মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল। ১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকায় চলে যান। সেখানে মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি মগবাজারে রংপুর ডেন্টাল নামে একটি চেম্বার খুলে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। সেখানে তিনি দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। শুধু স্বাবলম্বীদের কাছ থেকে ফি নিতেন।

Source link

Related posts

সৈয়দ নজরুল ইসলামের বাড়ি ঘিরে ‘স্মৃতি জাদুঘর’ গড়ে তোলার দাবি

News Desk

ফরিদপুর মেডিকেলে ২৪ ঘণ্টায় ১১ জনের মৃত্যু

News Desk

প্রেমের প্রতিশোধ নিতে গৃহবধূকে একাই খুন করে ঘাতক

News Desk

Leave a Comment