Image default
বাংলাদেশ

একসঙ্গে প্রাণ গেলো ৩ ছাত্রলীগ নেতার

রাজপথে একসঙ্গে দেখা যেত তাদের। স্লোগান ও হাত তালি দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিছিল করতেন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিন বন্ধু। এলাকায় ঘুরতেনও একসঙ্গে। আর এই তিন বন্ধুর জীবনের চাকাও থেমেছে একই দুর্ঘটনায়, একসঙ্গে।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টায় চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের পূর্ব নরহ গ্রামের মোল্লার টেক নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্য তিন জন কুমিল্লার।

তারা হলেন- মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের রামদেবপুর গ্রামের ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান খোকনের ছেলে শাহপরাণ তুষার (২২), একই এলাকার নরপাইয়া গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে শাকিল (২৩) ও ঝলম ইউনিয়নের চাঁপা কেশতলা গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে রেজাউল করিম (২৩)।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান শামীম বলেন, ‘আমি শুনেছি তাদের পরিকল্পনা ছিল, যশোর থেকে আসা নয়ন ও ঢাকার গাজীপুর থেকে আসা সাগর কুমিল্লা সদরে এক বন্ধুর বিয়ের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করবে। এরপর নয়ন ও সাগরসহ তিন বন্ধু তুষার, শাকিল ও রেজাউল মঙ্গলবার রাত কাটাবে তুষারের বাড়িতে। এরপর সকালে পাঁচ জন মিলে ঘুরতে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘নিহত তুষার দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, শাকিল হাসনাবাদ ইউনিয়নের নরপাইয়া ওয়ার্ড ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ও রেজাউল করিম ঝলম ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক। তারা সবাই মিছিল, মিটিং, সভা সেমিনারে থাকতো। আলাদা এলাকা হলেও তারা একসঙ্গে থাকতো। তারা মিছিলে আমার সঙ্গে থাকতো, এ দৃশ্য আমার চোখে ভাসছে। আমি কখনও তাদের স্মৃতি ভুলতে পারবো না। তারা করোনাকালে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি সহযোগিতার ফান্ড করেছিল। সেই ফান্ড থেকে গরিব ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

তুষারের শোবার খাটে বসে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে কাঁদছেন নিহতের মা মোবাশ্বেরা বেগম। তিনি চিৎকার করতে করতে বলেন, ‘আমার মানিক-ধন কইরে? আমারে ছাইড়া কেমনে যাইতে পারলোরে। আমার তিন পুতের মতো ছিল। মারে তোরা ছাইড়া যাইতে পারলি কেমনে?’

সন্তানহারা মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এসেছেন প্রতিবেশীরা। তবে কারও সান্ত্বনাই সন্তান হারানোর তাজা বেদনার গায়ে প্রলেপ দিতে পারছে না। চিৎকার করে কেঁদেই চলেছেন তুষারের বাবা-মা।

রেজাউলের স্বজনদের আহাজারি

নিহত শাকিলের ফুফাতো ভাই মোশারফ হোসেন বলেন, ‘১৪ বছর আগে আমার  ফুফা প্রবাসে মারা গেছেন। শাকিল ভাই পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকার একটি কনফেকশনারি দোকানে কাজ করতেন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। আমার ফুফু হৃদরোগী। ছেলে নিহত হওয়ার খবরে তিনি বাকরুদ্ধ। সকালের পর থেকে এখনও কথা বলতে পারছেন না। ঘটনা শোনার পর আমরা ভাইয়ের লাশের জন্য যাওয়ার সময় তিনি আমাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য রওনা দেন। কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বাবারে তুই কইরে বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আমরা এখনও চাঁদপুর আছি। ভাইয়ের লাশ জন্য অপেক্ষা করছি।’

আরেক নিহত রেজাউল করিম প্রসঙ্গে ঝলম ইউনিয়নের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফরাত আহমেদ ইফু বলেন, ‘রেজাউল মানুষের কথা চিন্তা করতো। সে গতকাল রাতেও আমাকে কল দিয়েছে। কথা হয়েছে। তারা তিন জন একসাথে থাকতো। কী হয়ে গেলো বুঝতে পারছি না।’

এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ।

Source link

Related posts

হারিয়ে যাওয়ার ৪১ বছর পর খোঁজ মিললো একলিমার

News Desk

দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর রমজান ও বৈশাখের শুভেচ্ছা

News Desk

চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৩২৭

News Desk

Leave a Comment