নাটোরে শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এগুলোর জন্য মাটি প্রয়োজন। আর তা জোগাতে কৃষকদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করছেন ভাটা মালিকরা। মাটি বিক্রি করতে জমিতে পুকুর খনন করছেন কৃষকরা। আর সেই মাটি বহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টর চলাচলে সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, ভাটার মালিকরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কৃষকদের দিয়ে মিথ্যা আবেদন করাছেন। আবেদনে বলা হচ্ছে, ওইসব জমিতে আবাদ হয় না। কিন্তু সেসব জমির প্রায় সবই দুই থেকে তিন ফসলি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবেদনের আগে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। আবেদন পাস করিয়ে মাটি কেনা হচ্ছে। আবার কখনও আশ্রয়ণ প্রকল্প, গোরস্থান, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নির্মাণাধীন রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্টে বিনামূল্যে কিছু মাটি টোকেন হিসেবে দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত স্থানান্তর করা হচ্ছে মাটি। এতে ঝুঁকিতে পড়ছে পুকুর কাটা জমির পাশের জমিগুলো। শঙ্কা তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতার।
স্থানীয়দের নানা প্রতিবাদ, আবেদন আর সংবাদকর্মীদের সংবাদ প্রকাশেও সুফল মিলছে না। এমন অবস্থায় ভবিষ্যৎ কৃষি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া, জলাবদ্ধতার দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা আর বাড়িঘর-রাস্তাঘাট ধ্বংসসহ নানা ক্ষতির শঙ্কায় দিন কাটছে স্থানীয়দের।
লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া এলাকার অধিবাসী সালাহউদ্দীন জানান, মাটিকাটার প্রতিবাদে বিভিন্ন দফতরে আবেদন, মানববন্ধন, বিক্ষোভ করেও কোনও লাভ হচ্ছে না।
নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, মাটি বহনকারী গাড়ির জন্য উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সরকারি বিভিন্ন দফতরে জানিয়েও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ওহিদুল হক জানান, সংবাদ প্রকাশ করেও লাভ হচ্ছে না। মাটি কাটার জন্য তিন ফসলি জমি ছাড়াও উপজেলার পদ্মবিলের ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে।
সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম জানান, গত মঙ্গলবার রাতে উত্তরা গণভবনের সামনে স্থানীয় লোকজন মাটি বহনের ১২টি ট্রাক্টর আটকালেও মধ্যরাত থেকে আবার সেসব গাড়ি চলাচল শুরু হয়।
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘অবৈধভাবে বা মিথ্যা তথ্যে আবেদন করে মাটি বিক্রির বিষয়টি জানা গেলে অভিযান চালানো হচ্ছে। জরিমানা ও মাটি কাটার যন্ত্র জব্দ করা হচ্ছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’