Image default
বাংলাদেশ

আয়কর কি? কারা আয়কর দিবেন, কারা দিবেন না

আয়কর কি? কারা আয়কর দিবেন, কত টাকা আয় হলে কত টাকা আয়কর দিতে হয়

আয়কর বিশেষ অর্থে আয়ের উপর কর। সরকারি, বেসরকারি, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান এর কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের উপর সাধারণত আয়কর আরোপ করা হয় বিধিসম্মত নিয়মে। আয়কর হচ্ছে সরকারি রাজস্ব বা আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

কটা পরিবার বা সংসার চালানোর জন্য যেমন পরিবারের কর্তা বা উপার্জনশীল সদস্যদেরকে খরচ দিতে হয় ঠিক তেমনি একটা দেশ বা রাষ্ট্র চালানোর জন্য দেশের জনগণকে খরচ দিতে হয়। রাষ্ট্রের সকল জনসাধারনের স্বার্থে রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে প্রদত্ত বাধ্যতামূলক অর্থ হল আয়কর।আয়কর হচ্ছে সরকারি রাজস্ব বা আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সাধারণ অর্থে যাদের উপর কর আরোপ করা হয় তাদেরকে বলা হয় করদাতা ।
আজকের এই আর্টিকেলের আমরা আলোচনা করব, আয়কর কাদের উপর প্রযোজ্য, কোন ধরনের আয়ের উপর কর দিতে হয়, একজন ব্যক্তির কি পরিমান ইনকাম হলে তাকে আয়কর দিতে হয়, আয়কর প্রদানের সময়সীমা এবং আয়কর হার ইত্যাদি সম্পর্কে।

আয় করের খাত সমূহ / কোন কোন আয় করের আওয়তা ভুক্ত
ইনকামট্যাক্স অর্ডিন্যান্স- ১৯৮৪ অনুযায়ী ৭ ধরনের খাত থেকে আয়, আয় করের আওতায় পড়ে

১। বেতনাদি

২। নিরাপত্তা জামানতের উপর সুদ

৩। গৃহ সম্পত্তির আয়

৪। কৃষি আয়

৫। ব্যবসা বা পেশার আয়

৬। মূলধনি মুনাফা

৭। অন্যান্ন উৎস হতে আয়

তবে রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় ফার্মের আয়ের অংশ এবং স্বামি, স্ত্রী বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের আয়ের খাতগুলিও সম্পৃক্ত হবে।

আয়কর সীমাঃ

সাধারণ ভাবে কোন ব্যক্তির বার্ষিক আয় যদি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হয় তাহলে তাকে আয় কর রিটার্ণ জমা দিয়ে হবে।

মহিলা বা ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বার্ষিক আয় ৩ লাখ টাকা অতিক্রম করলে, প্রতিবন্ধি করদাতার আয় বছরে ৪ লাখ টাকার বেশি হলে এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কর দাতার আয় বছরে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকার বেশি হলে তাদের কে আয়কর রিটার্ণ দাখিল করতে হবে। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে আয়ের পরিমান যাই হোক না কেন, কর দাতা কে আয়কর রিটার্ণ দাখিল করতে হবে।

করোনাভাইরাস মহামারি ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়ায়, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে।

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যাদের জন্য বাধ্যতামূলক:
প্রথমে জানা দরকার কারা বা কোন স্তরের নাগরিকগণ আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন। সাধারণভাবে কোনও ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে ৩,০০,০০০ টাকার বেশি হয় তবে তাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তবে নারী করদাতা ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সের করদাতার আয় যদি বছরের ৩,৫০,০০০ টাকার বেশি হয়, প্রতিবন্ধী করদাতার আয় যদি ৪,৫০,০০০ টাকা হয়, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার বার্ষিক আয় যদি ৪,৭৫,০০০ টাকা হয়, তাহলে এই সকল করদাতাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।

তবে ওপরে বর্ণিত করদাতা ছাড়াও যে সকল ব্যক্তি করদাতাকে সংশ্লিষ্ট আয় বছরের রিটার্ন দাখিল করতে হবে:
১. তিনি যদি কোনও ফার্মের অংশীদারি হন;
২. আয় বছরের পূর্ববর্তী তিন বছরের মধ্যে যেকোনও বছর করদাতার কর নির্ধারণ হয়ে থাকে বা তার আয় করযোগ্য হয়ে থাকে;

৩. কোনও কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হন;

৪. কোনও ফার্মের অংশীদারি হন;

৫. সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা কোনও বিধিবদ্ধ আইন বলে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারী হয়ে বছরে যেকোনও সময়ে ১৬,০০০ টাকা বা ঊর্ধ্বে মূল বেতন আহরণ করে থাকেন;

৬. কোনও ব্যবসায় নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদে (যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন) বেতনভোগী কর্মকর্তা বা কর্মচারী হন;

৭. আয় বছরে করদাতার আয়কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য হয়ে থাকে;

৮. মোটরগাড়ির মালিক থাকা (মোটরগাড়ি বলতে জিপ বা মাইক্রোবাসকেও বুঝাবে);

৯. মূল্য সংযোজন কর আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনও ক্লাবের সদস্য পদ থাকা;

১০. কোনও সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ হতে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করে কোনও ব্যবসা বা পেশা পরিচালনাকারী;

১১. চিকিৎসক, দন্তচিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ‌্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ‌্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসেবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোনও স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার নিবন্ধন থাকা;

১২. আয়কর পেশজীবী হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিবন্ধন থাকা;

১৩. কোনও বণিক বা শিল্প বিষয়ক চেম্বার বা ব্যবসায়িক সংঘ বা সংস্থার সদস্য পদ থাকা;

১৪. কোনও পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের কোনও পদে বা সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়া;

১৫. কোনও সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা সরকারের কোনও টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা;

১৪. কোনও কোম্পানি বা কোনও গ্রুপ অব কোম্পানির পরিচালনা পরিষদে থাকা;

১৫. মোটরযান, স্থান বা অন্য কোনও সম্পদের মাধ্যমে কোনও অংশীদারি কারবারে অংশগ্রহণ করা;

১৬. লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিক;

১৭. সকল টিআইএনধারী ব্যক্তি।

যেসকল ব্যক্তির আয়কর বিবরণী বা আয়কর রিটার্ন দিতে হবে না:

১. করযোগ্য আয় নাই; কিন্তু জমি বিক্রির জন্য ইটিআইএন গ্রহণ করেছে;

২. করযোগ্য আয় নাই, কিন্তু ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের জন্য ১২ ডিজিট ইটিআইএন নিয়েছেন;

৩. এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান;

৪. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়;

৫. কোনও তহবিল বা অনাবাসী ব্যক্তি বিশেষ নন এরূপ অনিবাসীর বাংলাদেশে কোনও স্থায়ী প্রতিষ্ঠান নাই;

৬. অনিবাসী ব্যক্তি যার দেশে কোনও স্থায়ী ঠিকানা বা ভিত্তি নাই;

৭. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সরকারি গেজেট আদেশভুক্ত কোনও শ্রেণির ব্যক্তি।

সম্পত্তি বা নগদ অর্থ আয়কর বিবরণীতে দেখাতে হলে যে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে:

১. যেক্ষেত্রে নগদ প্রদর্শন করা হবে সেক্ষেত্রে তা ৩০ জুন ২০২০-এ আইটি ১০বিএ নগদ, ব্যাংক বা ব্যবসায়ের পুঁজি হিসেবে প্রদর্শন করতে হবে।

২. অপ্রদর্শিত জমি, ফ্ল্যাট বা বিল্ডিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দলিল মূল্যের ওপর স্কয়ার ফিট হিসেবে নির্ধারিত কর পরিশোধ করতে হবে। কোনও অবস্থায় এই সকল সম্পত্তিকে নগদ মূল্য হিসেবে দেখিয়ে ১০% হারে কর বা শতাংশ হারে কর পরিশোধ করা যাবে না; নির্ধারিত বর্গমিটার অনুসারে কর পরিশোধ করতে হবে।

৩. এই পদ্ধতিতে সম্পদ আয় বিবরণীতে প্রদর্শন করলে কোনও প্রকার ঘোষণাপত্রের প্রয়োজন হবে না। দাখিলকৃত রিটার্ন বা সংশোধিত রিটার্ন সম্পদ বিবরণীর অংশে যথাস্থানে প্রদর্শন করে ‘অন্যান্য প্রাপ্তির ঘরে’– এতদসংক্রান্ত ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে।

৪. দাখিলকৃত আয়কর বিবরণীতে বা সংশোধিত আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পত্তি আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর অন্য কোনও ধারায় কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না।

Related posts

জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় সরকারের ব্যর্থতা : ফখরুল

News Desk

পর্যটকের অপেক্ষায় সুবলং ঝরনা

News Desk

আগামীতে টিকা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment