Image default
বাংলাদেশ

আজ ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫ বছর,বদলে গেছে পাহাড়

আজ ২ ডিসেম্বর। ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি। দীর্ঘ ২৪ বছর আগে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএস) মধ্যে দীর্ঘ দুই দশকের রক্তের হোলিখেলা শেষে ঐতিহাসিক এ চুক্তি সম্পাদিত হয়।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য অধিবাসীর পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি পালনে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচী নেয়া হয়েছে।

এ বছর ব্যতিক্রমী আয়োজনে শান্তির দিবসটি উদ্‌যাপন করবে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। পাহাড়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ছাড়াও চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় একাধিক কর্মসূচী নিয়েছে। এই চুক্তি সম্পাদনের পর পাহাড়বাসীর মধ্যে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির দুটি বিষয়ই রয়েছে। এককথায় একদিকে নানা ঝামেলা অন্যদিকে বিরুদ্ধ পক্ষের বিরোধিতার কারণে শান্তি চুক্তির এখনও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। এরপরও বদলে গেছে পাহাড়ের চিত্র। অচিন্তনীয় উন্নয়ন হয়েছে পাহাড়ের তিন জেলায়। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে এর সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে সবুজের পাহাড়ও এগিয়ে যাচ্ছে। গহীন অরণ্যেও মোবাইল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক পাহাড়বাসীর জন্য এক অনন্য প্রাপ্তি। এ ছাড়া সরকারী বিভিন্ন খাতে যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন রয়েছে তেমনি বেসরকারী পর্যায়েও থেমে নেই। এসবের মধ্যেও তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে আজ এদিনটি পালন করবে।

সবচেয়ে দুঃখজনক সত্যটি হচ্ছে পাহাড়ে পাহাড়ীদের ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষের যে সূত্রপাত ঘটেছে তার অবসান হয়নি।এদিকে সরকারের দাবি শান্তি চুক্তির অধিকাংশ শর্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। অপরদিকে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির দাবি হচ্ছে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ধীরে চলো নীতি রয়েছে। আর এ কারণেই স্থায়ী শান্তি এখনও ফিরে আসেনি। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর পাহাড়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে দফায় দফায় সংলাপের পর এই দিনে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বর্তমান সরকার বিগত ২৪ বছরে শান্তি চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করেছে। অবশিষ্ট ১৫টি ধারা আংশিক এবং ৯টি ধারা বর্তমানে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আবার এর মধ্যে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ অত্যন্ত জটিল অবস্থায় রয়েছে। তবে শান্তি চুক্তির আংশিক ও অবাস্তবায়িত ধারাসমূহ বাস্তবায়নে সরকার পক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে দাবি করেছে। শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের যেমন অবসান ঘটেছে তেমনি এর পর থেকে এগিয়ে চলেছে অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ।

এসবের পরও শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের শেষ নেই। সরকার পক্ষের দাবি চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। অবশিষ্ট ধারা বাস্তবায়িত হবে। তবে এর পাশাপাশি আধিপত্য বিস্তারের ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর লড়াই চলে প্রায়শই। চুক্তির পর গত ২৪ বছরে পাহাড়ে সংঘাত ও সরকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সাড়ে সাত শতাধিক প্রাণ গেছে। এসব সংঘাত ও সংঘর্ষ পাহাড়বাসীর সম্প্রীতির ওপর আঘাত হানছে। চুক্তি স্বাক্ষরের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার হাতে শান্তি বাহিনীর নেতা সন্তু লারমার দলবল নিয়ে অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। তবে একটি অংশ রয়ে যায় এর বাইরে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন সন্তু লারমার বিরোধী নেতা প্রসিত খিসা। যারা পরবর্তীতে ইউপিডিএফ নামে আঞ্চলিক সংগঠনের জন্ম দিয়েছেন। এরা মূলত শান্তি চুক্তি বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত।

এ কারণে চুক্তির পর থেকে জেএসএস ও ইউপিডিএফের সশস্ত্র ক্যাডাররা প্রায়শ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফলে পাহাড়ের জীবন পরিপূর্ণভাবে শান্তিময় নয়। চুক্তির পর পর্যায়ক্রমে জেএসএস থেকে বেরিয়ে গঠন হয়েছে জেএসএস এম এন লারমা, ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ থেকে বেরিয়ে জন্ম হয়েছে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। এসব গ্রুপের সশস্ত্র ক্যাডাররা সরকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই তো রয়েছেই। এসব ঘটনা নিয়ে সাধারণ পাহাড়ীদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে নানা জনের নানামত রয়েছে। কারও মতে এত কিছুর পরও মানুষের শান্তির ভাগ্যে কোন পরিবর্তন ঘটেনি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানির ঘটনা বাড়িয়ে দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। পরস্পর বিরোধী দুই সংগঠনের চার গ্রুপের সহিংসতা পাহাড়বাসীর সম্প্রীতির ওপরও আঘাত হানছে।

Related posts

দেড় বছর ধরে কবরস্থানে বসবাস করছে ৩ পরিবার

News Desk

সিএনজি দেখেই টোল ঘরের দড়ি টান, উল্টে শিশু নিহত

News Desk

সুবর্ণচরের ২ ইউনিয়নে বিপুল ভোটারের উপস্থিতি

News Desk

Leave a Comment