জামালপুরে দুই বছর ধরে বন্ধ থাকা শিকদার গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কেন্দ্র ‘পাওয়ার প্যাক মতিয়ারা’য় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে জামালপুর পৌর শহরের শাহপুরে জামালপুর-শেরপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে অবস্থিত কেন্দ্রটির ২২ নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাত-পা বেঁধে জিম্মি করে কয়েক কোটি টাকার মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যানেজার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, শিকদার গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে ৪-৫ জনের একদল দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে। প্রথমে দুর্বৃত্তরা মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে কয়েকজন ইলেক্ট্রিশিয়ানের খোজ করে। নিরাপত্তাকর্মীরা ইলেক্ট্রিশিয়ানদের চিনতে না পারায় রেজিস্ট্রার খাতায় তাদের নাম খুঁজতে থাকেন। এ সময় কৌশলে অস্ত্রের মুখে ১৫ জন আনসার সদস্য ও নিরাপত্তাকর্মীদের জিম্মি করে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে।
তিনি জানান, পরে প্ল্যান্টে কর্মরত প্রকৌশলীসহ সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও জিম্মি করে একটি ভবনে আটকে রাখে। এরপর রাতভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লুটপাট চালায় ডাকাতরা। এ সময় প্ল্যান্টের ভেতরে থাকা কয়েকটি কন্টেইনার থেকে মূল্যবান ক্যাবল ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ লুট করে তারা। অফিসগুলো থেকে মূল্যবান উপকরণ, সিসি ক্যামেরার ড্রাইভ, কম্পিউটার ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
ম্যানেজার আরও জানান, সবার হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় জিম্মি থাকায় কেউ কোনও কিছু বুঝতে পারেনি ও কতজন ভেতরে প্রবেশ করেছে তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে যে ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি লুট করা হয়েছে, তা ট্রাক ছাড়া পরিবহন করা সম্ভব নয়। ধারণা করা যায়, মূল ফটক দিয়ে ট্রাক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে এবং মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। জামালপুর সদর থানায় এ বিষয়ে মামলা করা হবে।
জামালপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহরাব হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শিকদার গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র পাওয়ার প্যাক মতিয়ারায় ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ১ মার্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। জ্বালানি সংকটে গত ২০২২ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফার্নেস ওয়েল ব্যবহার করে উৎপাদনে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির গ্যাস ব্যবহারের অনুমতিও ছিল।