আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করলেও ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। সারা দিনই রোদের যে প্রখরতা ছিল, তা মানুষকে বুঝতেই দেয়নি এই জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রোদের এমন প্রখরতায় মানুষজনের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘সকাল ৯টায় এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
যে তাপমাত্রাটি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর, তাতে করে এই জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। আবহাওয়ার অধিদফতরের তথ্যমতে, যদি তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হয়, তাহলে সেটিকে ‘মৃদু শৈত্যপ্রবাহ’ বলে। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তাকে ‘মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ’ এবং তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তাকে ‘তীব্র শৈত্যপ্রবাহ’ বলে। আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটিকে ‘তীব্রতর শৈত্যপ্রবাহ’ বলে।
সেই হিসাবে এই জেলায় যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তাকে মৃদু ‘শৈত্যপ্রবাহ’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে জেলায় সকাল থেকেই রোদের যে প্রখরতা ছিল, তাতে করে মনেই হয়নি যে জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসও ছিল না। যদিও আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এই জেলার বাতাসের গড় গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার।
জেলায় সকাল থেকেই দেখা মেলে ঝকঝকে আকাশ। সকাল সকালেই সূর্য তাপ বিকিরণ করতে শুরু করে। দুপুরে যে রোদ ছিল, তাতে করে মানুষজনকে গরম কাপড় পরিধান ছাড়াই চলাচল করতে দেখা গেছে। পথে-মাঠে মানুষজন কাজ-কর্ম করছেন স্বাভাবিকভাবে। অথচ গত দুদিন আগেও এই চিত্র ছিল না জেলায়। যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন বুধবার ছিল সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও গত দুদিন ছিল হিমেল বাতাস। আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাবে, বুধবার ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয়েছে বাতাস। সেই সঙ্গে সেদিন দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে শীতও অনুভূত হয়েছে বেশি।
শুক্রবার জেলার বিভিন্ন এলাকার কর্মজীবী মানুষের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এসময় তাদের শৈত্যপ্রবাহের কথা জানালে তাদের অনেকেই বিশ্বাসই করতে পারেননি। আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণ যাই হোক, রোদের প্রখরতায় শীতপ্রবণ এই এলাকার মানুষ উচ্ছ্বসিত।
দুপুর আড়াইটার দিকে কথা হয় জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার দূর্গাডাঙ্গা এলাকার কৃষক বিশ্বজিত রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন শীত গেলো। বৃষ্টির ভাবও ছিল, কিন্তু হয়নি। তবে এখন রোদ ওঠায় মানুষজন ভালোভাবে কাজ করতে পারছে। দুদিন আগেও যে ঠান্ডা ছিল, এখন অবস্থা অনেক ভালো।’
সদর উপজেলার পাঁচবাড়ি হাটে ধান বিক্রি করতে আসা একই এলাকার কৃষক এনামুল হক বলেন, ‘শীতের মধ্যে রোদ উঠলে কাজকর্ম করা অনেক সুবিধা। আমরা এখন কাজকর্ম করতে পারছি। এখনকার সময়ে শীত হওয়ারই কথা, কিন্তু এখন দেখছি রোদ উঠেছে। শীত হলেই বরং আমাদের কষ্ট। এমন আবহাওয়া হলেই ভালো।’
একই এলাকার কৃষক জীবন রায় বলেন, ‘রোদ উঠলে কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু বৃষ্টি বা শীত হলে আমাদের অনেক কষ্ট। ঠান্ডার মধ্যে কাজ করা যায় না। সুস্থ লোকও অলস হয়ে পড়ে।’
শৈত্যপ্রবাহের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অফিসের কথার সঙ্গে তো মিল নেই। এখন রোদ উঠেছে, ঠান্ডা বোঝা যাচ্ছে না। শুধু রাত হলেই ঠান্ডা বোঝা যায়। গতকালও রোদ ছিল, আজও রোদ উঠেছে।’
পাঁচবাড়ি হাটে বাঁশের তৈরি ডালি, খাচাসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে বিক্রি করতে এসেছেন মন্টু বৈশ্য। রোদ ওঠায় মাথায় দিয়েছেন ছাতা। কথা হলে তিনি বলেন, ‘সকাল আর সন্ধ্যায় ঠান্ডা। দিনের বেলায় রোদ। রোদ উঠলেই ভালো, কাজকাম করতে পারি ঠিকমতো। ঠান্ডা হলে তো বাজারে লোকজন দেখা যায় না। সন্ধ্যার আগেই মানুষজন বাড়িতে চলে যায়, বেচাবিক্রিও কমে যায়।’