উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসছে শীত, হাসপাতালে বাড়ছে ভিড়
বাংলাদেশ

উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসছে শীত, হাসপাতালে বাড়ছে ভিড়

অগ্রহায়ণের দিন যত যাচ্ছে, ততই রোদের প্রখরতা ও সূর্যের উত্তাপ ম্লান হচ্ছে। বেলা গড়িয়ে দুপুরের কিছুটা কড়া রোদ পাওয়া গেলেও বিকালের গাড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই গায়ে জড়াতে হচ্ছে গরম কাপড়। সন্ধ্যার পর গা শিহরে ওঠা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। রাত যত গভীর হচ্ছে, ততই কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে প্রকৃতি। ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে উত্তরাঞ্চলের একদিকে চলছে শীত বন্দনা। অন্যদিকে, ফ্লু, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

রাজশাহী বিভাগে শীতের পরিস্থিতি

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাজশাহীতে সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এদিন সকাল ৬ টায় সর্বনিম্ন ১৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন ১৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৫ নভেম্বর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ জেলায়। সেখানে সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

নওগাঁ জেলার বদলগাছি আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৬ টায় সর্বনিম্ন ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সামনে তাপমাত্রা আরও কমবে। অর্থাৎ রাজশাহী অঞ্চলে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদের ব্যবধান কমেছে। বেড়েছে শীত অনুভূতি। ঋতু পরিবর্তনে অসুখের প্রকোপও বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে অবস্থিত মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ উপজেলার হাসপাতালেও আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের চাপ বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে শিশু রোগীদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী আসছে রাজশাহী শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে। এতে বাড়তি ভিড় দেখা যাচ্ছে সর্বত্রই।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ মানুষ সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। থাকছে মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, হাঁচির মতো লক্ষণ। কারও কারও কাঁপুনি নিয়ে জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করছে। শারীরিক দুর্বলতাও দেখা দিচ্ছে। ডায়রিয়াসহ অ্যাজমা রোগীরা বেশি ভুক্তভোগী বলে জানা গেছে।

রোগী ও স্বজনরা বলছেন, পরিবারে একজনের জ্বর হলে তার সংস্পর্শে থাকা অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন লক্ষণ নিয়ে রাজশাহীতে ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। যেটিকে আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত শারীরিক সমস্যা হিসেবেই দেখছেন আক্রান্তরা। অনেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে উঠছেন। আবার অনেকে জটিলতা নিয়ে জরুরি বিভাগেও ভর্তি হচ্ছেন।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বাসিন্দা শামীমা আক্তার বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পর্যায়ক্রমে পরিবারের চার সদস্য জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। একজন সুস্থ হওয়ার পর আরেকজন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আমার মেয়েটার বয়স একবছর ছয় মাস। তার বেশকিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে ভালো না হওয়ায় পরে রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়েছে। এখন আমার শাশুড়ি অসুস্থ। পরিচিত এক ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন।

শীতের কাপড় কিনছেন উত্তরের মানুষ

এদিকে, শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকায় নগরীর গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার, কোর্ট বাজার, তালাইমারি, বিনোদপুর বাজারসহ প্রধান প্রধান সড়কের মোড়ে ফুটপাতে জমে উঠেছে গরম কাপড়ের কেনাকাটাও।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন শীতের পূর্ব প্রস্তুতি শুধু গরম কাপড় পড়া নয়; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ আরও বেশকিছু বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় ফ্লু এর প্রকোপ বাড়ে। এবারও বেড়েছে। সতর্ক থাকার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের  অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রংকিওলাইটিস ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এ সময়টাই ফলমূলসহ গরম খাবার বেশি খেতে হবে। গরম কাপড় পড়তে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ঘেমে না যায়। আর শরীরে শক্তি জোগায় এমন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। আর জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শঙ্কর কে বিশ্বাস বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত সর্দি, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ অ্যাজমার রোগী সংখ্যা বাড়ছে। বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ দুই জায়গাতেই রোগীর চাপ বেড়েছে। আমরা রোগীদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

রংপুরে শীতের সঙ্গে কনকনে বাতাস

রংপুর বিভাগেও শীতের তীব্রতা বেড়েছে। শীতের সঙ্গে বইছে কনকনে বাতাস। এতে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই জেলায়ও ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত তিন দিনে আড়াই শতাধিক মানুষ ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের আউটডোরে আক্রান্ত রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

শীতকালীন সবজির আবাদ

রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি, নীলফামারীতে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ১৪ ডিগ্রি ও রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, রংপুর বিভাগে প্রতিদিন শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। যা এই শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন।

তিনি বলেন, রংপুর বিভাগে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা অনেক নিচে নেমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশার প্রকোপ বাড়তে পারে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, এবার শীতের প্রকোপ নভেম্বর মাসেই বাড়তে শুরু করেছে। শীতের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে। বয়স্ক নারী-পুরুষরাও শীতজনিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি শিশুদের পর্যাপ্ত শীত বস্ত্র পরানো, ভোরে আর সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে বের না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

তাপমাত্রা ওঠানামা করছে মৌলভীবাজারে

চা বাগান, হাওর ও পাহাড় বেষ্টিত জেলা মৌলভীবাজারে গত কয়েকদিন ধরেই তাপমাত্রা ১৩ থেকে ১৭ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। জেলাজুড়ে বেশি ঘন কুয়াশা লক্ষ্য করা গেছে। চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা শ্রীমঙ্গলে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী আনিসুর রহমান বলেন, শুক্রবার তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ১৩ ও বুধবার ১৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নানা বয়সী মানুষ সর্দি-কাশি, জ্বর নিয়ে আসেন। হাসপাতালে ভর্তি কম হলেও
আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মামনুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো শীতজনিত রোগে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগী বাড়ছে।’

Source link

Related posts

টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু আজ থেকে

News Desk

বিয়েবাড়ির আনন্দে মুহূর্তেই বিষাদের ছায়া

News Desk

চিকিৎসা শেষে আজ দেশে ফিরছেন রওশন এরশাদ

News Desk

Leave a Comment