অবরুদ্ধ খুলনায় মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই হয়ে গেল বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের পর এটি দলটির তৃতীয় বিভাগীয় বড় সমাবেশ। এই সমাবেশ ঘিরে গত দুই দিন সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় খুলনাকে। সে কারণেই খুলনার সমাবেশে বিএনপি কী দাবি তুলল বা দলীয় কী নির্দেশনা দিল তা ছাপিয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে ‘সফল সমাবেশ’।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে উত্তপ্ত ছিল খুলনা। সমাবেশের আগের দিন নগরীতে শোডাউন করে ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে শুক্র ও শনিবার পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা আসে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে। ফলে খুলনার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। দলের স্থানীয় নেতারা জানান, ময়মনসিংহের সমাবেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপিও কৌশল বদল করেছে। তাঁরা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আশপাশের জেলার নেতাকর্মীদের খুলনায় নিয়ে আসতে শুরু করেন। শুক্রবার রাতেই সমাবেশস্থলে অবস্থান নেন দূরদূরান্ত থেকে আসা দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। বাস চলাচল করেনি। চলেনি লঞ্চ। তবে নৌপথে সীমিত পারাপার ছিল। সেটাকেই কাজে লাগিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তাঁরা এসেছেন ট্রেন, ট্রাক, পিকআপ, বালুবাহী ট্রলার, নৌকা এবং কয়েক মাইল পায়ে হেঁটে।
গতকাল সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। একদিকে নিউ মার্কেট থেকে হাদিস পার্ক, আরেক দিকে ময়লাপোতা থেকে পার্ক রোড পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নেতাকর্মীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন।
সমাবেশে আগতরা দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি চেয়ে স্লোগান দিয়েছেন। তাঁদের কারো হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। কেউ কেউ জাতীয় পতাকা মোড়ানো লাঠি নিয়েও এসেছিলেন। আবার শহরের বাইরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লাঠি, গজারি ও রামদা নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। তবে পুরো শহর ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের দখলে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা রেলস্টেশনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। বিএনপির দাবি, দুপুর ২টার পর রেলস্টেশন ৫ নম্বর নৌঘাটে বিএনপির এক কর্মীকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সকালে দৌলতপুর নতুন রাস্তায় আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করার পর বিকেলে খালিশপুরে বৈকালিতে বিএনপি অফিসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই
সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচনে ক্ষমতায় গিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালে নিশিরাতে ভোট হয়ে গেছে। দুই নির্বাচনেই মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ২০২৩ সালে নির্বাচন আসছে। এবারও ক্ষমতাসীনরা একই কায়দায় নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার পাঁয়তারা করছে। এ জন্য নিজেদের মতো নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে তারা।
গাইবান্ধার নির্বাচন বন্ধ করা নির্বাচন কমিশনের কৌশল বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, নিজেদের ভালো দেখানের জন্য সব রকম কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তারা। গাইবান্ধায় ভালো নির্বাচন করেছে। কিন্তু ডিসি-এসপিরাই তাদের কথা শোনে না। তারা কী নির্বাচন করবে? তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।
সমাবেশ বানচাল করতে সরকার সব চেষ্টা করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খুলনাবাসী অসাধ্য সাধন করেছে। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে সব জায়গায় বাধা দিয়েছে সরকার। বাস, লঞ্চ, নৌকা—সব বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তাতেও জনস্রোত ঠেকানো যায়নি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। অথচ সরকারই বলেছিল, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ ধরনের মিথ্যা প্রচার করে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলছে। ১৯৭৪ সালেও আওয়ামী লীগের আমলে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর বইতে লিখেছেন, আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা ও লুটপাটের কারণে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। ’