কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা করা কঠিন কিছু নয়। অনেকে তো কোন কোর্স না করে, কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা বই পড়ে কোরিয়ান ভাষা শিখে ফেলে। যদিও এর সংখ্যা খুব কম। সত্যি কথা বলতে, যেকোনো ভাষা শেখাই সহজ যদি সঠিক দিক নির্দেশনা মোতাবেক শেখা যায়।
কোরিয়ান ভাষা শেখার অন্যতম প্রধান কারণ হল, কোরিয়াতে যাওয়া এবং সেখানে চাকরি করা। যদি প্রশ্ন করা হয় যে, সবার আগে 5G চালু হয় কোন দেশে? আমি জানি, সবাই একটা উত্তরই দিবেন সেটা হলও, কোরিয়াতে। প্রযুক্তির দিক দিয়ে পৃথিবীতে যত দেশ রয়েছে তাদের মধ্যে সবার উপরেই যে দেশটির নাম আসবে, সেটি হচ্ছে কোরিয়া।
এক সময় কোরিয়া একক কোন রাষ্ট্র থাকলেও বর্তমানে বিভক্ত কোরিয়া একটা উত্তর কোরিয়া, অপরটি দক্ষিণ কোরিয়া। আমরা কোরিয়া বলতে মূলত দক্ষিণ কোরিয়াকেই বুঝি। কেননা দক্ষিণ কোরিয়া প্রযুক্তি, অর্থনীতির দিক দিয়ে যত উন্নত, উত্তর কোরিয়া ঠিক ততটাই অনুন্নত।
কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা
চাকরির সুবাদে অনেকেই কোরিয়ান ভাষা শিখতে হয়। আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো কিভাবে খুব অল্প সময়ে কোরিয়ান ভাষা শিখতে পারবেন সেই সাথে এটাও এই ভাষা শিখলে আপনার সুবিধা।
কেন কোরিয়ান ভাষা শিখবেন?
প্রথমত আপনি যদি কোরিয়ান ভাষা পারেন তাহলে, (EPS) Employment permit system এর মাধ্যমে আপনি কোরিয়া যেতে পারবেন। কোরিয়ান সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ২০০৭ সালে একটা চুক্তি হয়েছিল।
সেই চুক্তি অনুযায়ী ২০০৮ সাল থেকে সবচেয়ে কম খরচে আপনি সরকারিভাবে কোরিয়া যেতে পারবেন। তবে, তার জন্য আপনাকে কোরিয়ান ভাষা জানতে হবে এবং কোরিয়া ভাষায় একটা পরীক্ষা দিতে হবে। সেই পরীক্ষায় পাশ করলে, তবেই আপনি কোরিয়ায় যেতে পারবেন। বাংলাদেশে অনেক নামকরা কোরিয়ান কোম্পানি রয়েছে যেমন:
Samsung
LG
Hyundai ইত্যাদি
এইসব কোম্পানিতে বিভিন্ন সময় কোরিয়ান ভাষা জানা লোকের প্রয়োজন পড়ে। আপনি চাইলে কোরিয়ান ভাষা শিখে খুব সহজেই এইসব কোম্পানিগুলোতে চাকরি করতে পারেন। এছাড়াও উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রতি বছর কোরিয়ান সরকার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্যে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে থাকে।
কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সারাবিশ্বে নামকরা। আপনি যদি কোরিয়ান ভাষা জেনে থাকেন তাহলে এই স্কলারশিপ পাওয়া আপনার কাছে অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
সহজে কোরিয়ান ভাষা শেখার উপায়?
মূলত ৩ ভাবে কোরিয়ান ভাষা শিখতে পারবেন। যথা:
কোরিয়ান ভাষা ট্রেনিং সেন্টার বা ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে
অনলাইনের কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্স
কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা বই
কোরিয়ান ভাষা ট্রেনিং সেন্টার বা ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে
সরকারিভাবে কোরিয়ান ভাষা শেখায় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান। আপনাকে এই দুই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হলে, কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার
কোরিয়ান সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারও কোরিয়ান ভাষার কোর্স পরিচালনা করে আসছে। মিরপুর রোড, দারুসসালাম, ঢাকায় অবস্থিত। কোরিয়া প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পড়ানো হয়। প্রত্যেক শিক্ষক KUT/JOCV/JICA/ILO/KOICA থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
আপনি চাইলে এখান থেকেও কোরিয়ান ভাষা শিখতে পারেন। এখানে, কোরিয়ান ভাষা শেখাটা বেশ বুদ্ধিমানে কাজ হবে বলা যায়।
আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইন্সটিটিউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে কোরিয়ান ভাষা শিখতে পারেন। সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে। যথা:
উচ্চতর ডিপ্লোমা
ডিপ্লোমা
সিনিয়র সার্টিফিকেট
জুনিয়র সার্টিফিকেট
প্রতিটি কোর্সের মেয়াদ ১ বছর এবং ১২০ ঘনটা। শুরু হয় জুলাই মাসে শেষ হয় জুন মাসে। HSC পাশের পর যেকেউ ভর্তি হতে পারবে। তবে, জুনিয়র সার্টিফিকেট কোর্স না করে বাকি উচ্চতর, ডিপ্লোমা বা সিনিয়র কোর্সে ভর্তি হওয়া যাবে না।
যদি অন্যকোন ভাষা শিক্ষা ইন্সটিটিউট থেকে জুনিয়র কোর্স করা থাকে তাহলে, সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভর্তি হওয়া যাবে।
আপনি চাইলে এখান থেকেও কোরিয়ান ভাষা শিখতে পারেন। এখানে, কোরিয়ান ভাষা শেখাটা বেশ বুদ্ধিমানে কাজ হবে বলা যায়।
আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইন্সটিটিউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে কোরিয়ান ভাষা শিখতে পারেন। সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে। যথা:
- উচ্চতর ডিপ্লোমা
- ডিপ্লোমা
- সিনিয়র সার্টিফিকেট
- জুনিয়র সার্টিফিকেট
প্রতিটি কোর্সের মেয়াদ ১ বছর এবং ১২০ ঘনটা। শুরু হয় জুলাই মাসে শেষ হয় জুন মাসে। HSC পাশের পর যেকেউ ভর্তি হতে পারবে। তবে, জুনিয়র সার্টিফিকেট কোর্স না করে বাকি উচ্চতর, ডিপ্লোমা বা সিনিয়র কোর্সে ভর্তি হওয়া যাবে না।
যদি অন্যকোন ভাষা শিক্ষা ইন্সটিটিউট থেকে জুনিয়র কোর্স করা থাকে তাহলে, সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভর্তি হওয়া যাবে।
ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৫ মাস মেয়াদে ৬০ ঘণ্টার ক্লাস করে আপনি খুব সহজে কোরিয়ান ভাষা শিখতে পারেন। নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা HSC পাশ। কোর্সের আসন সংখ্যা ৪০। প্রতি বছর ১ লা জুলাই থেকে ৩০ জুলাই ভর্তি নেয়া হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্সটিটিউট অব ল্যাংগুয়েজেস
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্সটিটিউট অব ল্যাংগুয়েজেসে L1 ও L2 দুই ধরনের কোর্স অফার করে। প্রতিটি কোর্স ২ মাস মেয়াদি হয়ে থাকে। নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা HSC পাশ।
এছাড়াও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টার আছে যেগুলো কোরিয়ান ভাষা সহ আরও অনেক ধরনের ভাষা শিখার ব্যবস্থা করে থাকে। তবে, এগুলোতে খরচের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।
অনলাইনের কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্স
অনলাইনে আপনি ঘরে বসে খুব সহজেই এই ভাষা শিখতে পারেন। আপনি চাইলে ভাষা শিক্ষার বিভিন্ন ব্লগে গিয়ে খুব সহজেই শিখতে পারেন।
- শিক্ষক.কম ফ্রি কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্স
- ফ্রি কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা ওয়েবসাইট
- ঘুড়ি অনলাইন কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা
এছাড়াও আপনি ইউটিউবে এ ভাষা শিখতে পারেন। ইউটিউবে বিভিন্ন চ্যানেল আছে যারা খুব সহজভাবে এই ভাষা শিখিয়ে থাকে। এদের মধ্যে Easy Learn With Rakib, Korea Bangla Channel গুলো খুব সহজ এবং আকর্ষণীয়ভাবে শিখিয়ে থাকে।
আমি পারর্সোনালি ইউটিউব দেখে শিখার কথা বলবো। এতে করে শিখার সময় একঘেয়েমি লাগবে না।
কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা বই
বাজারে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার বই পাওয়া যায় যেগুলো থেকে খুব সহজেই বিভিন্ন ভাষা শিখা যায়। আপনি চাইলে এইসব বই থেকেও কোরিয়ান ভাষা শিখে পারেন।
- ৩০ দিনে শিখুন আধুনিক পদ্ধতিতে কোরিয়ান ভাষা
- সহজ কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা
- ৩০ দিনে কোরিয়ান ভাষা শিখুন
কিভাবে অতি অল্প সময়ে কোরিয়ান ভাষা শিখবেন
আপনি যদি অতি অল্প সময়ে কোরিয়ান ভাষা শিখতে চান তাহলে, এই পদ্ধতিগুলো জেনে রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। কেননা আপনি যদি গৎবাঁধা পদ্ধতিতে শিখতেই থাকেন তাহলে, একদিকে যেমন প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো শিখতে পারবেন না, অন্যদিকে সময়ও অনেক বেশি লাগবে।
তবে আপনি যদি নিম্ন লিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাহলে, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এই ভাষা শিখে নিজেকে পারদর্শী করে তুলতে পারবেন। পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার উপায় জানা থাকলে আসলে কোরিয়ান ভাষা শেখায় মনোযোগ দিতে পারবেন।
১. কোরিয়ান বর্ণমালা শিখুন: প্রথমেই আপনাকে কোরিয়ান বর্ণমালাগুলো চিনতে হবে এবং সেটা খুব মনোযোগ সহকারেই। অনেকেই মনে করে যে, কোরিয়ান ভাষা অনেক কঠিন কিন্তু আপনি যদি এই ভাষা শিখা শুরু করেন তাহলে, মনে হবে এইটা ইংরেজি ভাষা শেখা থেকেও অনেক সহজ।
২. কোরিয়ান সংখ্যাবাচক শব্দ শিখুন: তারপর আপনাকে কোরিয়ান সংখ্যাবাচক শব্দগুলো শিখতে হবে। এইটা আপনাকে গণনার কাজে অনেক বেশি সাহায্য করবে।
৩. শব্দার্থ শিখুন: এরপর আপনাকে আপনাকে কোরিয়ান সাধারণ শব্দভাণ্ডারগুলো শিখতে হবে। আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় যে শব্দগুলো সচারচর ব্যবহার করে থাকি সেই শব্দ বা বাক্যগুলোকে কোরিয়ান ভাষায় কিভাবে বলা হয় সেটা জানতে হবে।
অবশ্যই আপনাকে সহজ শব্দগুলো দিয়ে শুরু করতে হবে। আপনি যদি প্রথমেই জটিল শব্দগুলো দিয়ে শুরু করেন তাহলে আপনার পক্ষে সব একসাথে মনে রাখা সম্ভব হবে না। আমরা প্রতিদিনের কাজে যেই শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকি যেমন: এক কাপ চা দেও। কফির বিল কতো হয়েছে, আপনাদের রেস্টুরেন্টে কি কি খাবারের মেন্যু আছে, মোবাইলের চার্জ শেষ ইত্যাদি এই রকম সহজ বাক্য দিয়ে শুরু করুন।
৪. গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত ভাষা শিখুন: তারপর সেই সব বাগধারা এবং প্রবাদ বাক্যগুলো শিখার চেষ্টা করুন যেগুলো আমরা আমাদের সাধারণ কথোপকথনে ব্যবহার করে থাকি। আমরা যেই শব্দগুলো প্রতিদিনকার কাজে ব্যবহার করে থাকি সেই শিখুন আগে।
৫. কোরিয়ান ব্যাকরণ শিখুন: ভদ্রভাবে কথা বলার ফর্ম বুজতে হবে। আপনি যে কথা বলছেন সেটা ব্যক্তি বা কর্তার ভিন্নতা উপর নির্ভর করে বলতে হবে। যেমন: ইংরেজিতে You তুমি, আপনি, তুই সবাইকে বুজায়, কিন্তু কথা বলার ধরণের উপর বুজা যায় যে সেটা আপনাকে কিভাবে সম্বোধন করছে। এই সাধারণ তবে অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
৬. কোরিয়ান ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করুন: আর সর্বশেষ এবং সবার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলও আপনি এমন একজনের সাথে কথা বলুন যে কোরিয়ান ভাষা জানে। তার সাথে কোরিয়ান ভাষায় কথোপকথন করার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনি আপনার দুর্বলতাগুলো নিজেই শনাক্ত করতে পারবেন। ফলশ্রুতিতে কোরিয়ান ভাষাটা আপনার আয়ত্তে আনা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
পরিশেষে
আপনি যেখান থেকেই কোরিয়ান ভাষা শিখুন না কেন দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলছে। প্রযুক্তি নির্ভর এই পৃথিবীতে কোরিয়াকে একরকম রাজাই বলা চলে। আর সেই রাজার দেশে আপনি স্বল্প খরচে ভালো চাকুরীর আশায় যেতে চাইলে কোরিয়ান ভাষা শিখার বিকল্প কিছুই দেখছি না।